পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী আলোচনায় উদারতার ব্যপ্তি হইতেছে এবং সকল দেশের মহাপুরুষদের চরিত স্মরণ করিয়া ভক্তির সাধনায় মন রসাভিষিক্ত হইয়া উঠিতেছে ; যেখানে সংকীর্ণ বৈরাগের কঠোরতার দ্বারা মানুষের সরল আনন্দকে বাধাগ্রান্ত করা হইতেছে না ও সংযমকে আশ্ৰয় করিয়া স্বাধীনতার উল্লাসই সর্বদা প্রকাশমান হইয়া উঠিতেছে ; যেখানে সূর্যোদয় সূর্যন্ত ও নৈশ আকাশে জ্যোতিষ্কসভার নীরব মহিমা প্রতিদিন ব্যৰ্থ হইতেছে না, এবং প্রকৃতির ঋতুউৎসবের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আনন্দসংগীত একসূরে বাজিয়া উঠিতেছে ; যেখানে বালকগণের অধিকার কেবলমাত্র খেলা ও শিক্ষার মধ্যে বন্ধ নহে, তাহারা নানা প্রকারে কল্যাণভার লইয়া কর্তৃত্বগীেরকের সহিত প্রতিদিনের জীবনচেষ্টার দ্বারা আশ্রমকে সৃষ্টি করিয়া তুলিতেছে এবং যেখানে ছোটাে-বড়ো বালকবৃদ্ধ সকলেই একাসনে বসিয়া নতশিরে বিশ্বজননীর প্রসন্ন হন্ত হইতে জীবনের প্রতিদিনের এবং চিরদিনের অন্ন গ্রহণ করিতেছে। । XV9ybr ধর্মের অধিকার যে-সকল মহাপুরুষের বাণী জগতে আজও অমর হইয়া আছে তাহারা কেহই মানুষের মন জোগাইয়া কথা কহিতে চেষ্টা করেন নাই। তঁহারা জানিতেন মানুষ আপনার মনের চেয়েও অনেক বড়ো- অর্থাৎ মানুষ আপনাকে যাহা মনে করে সেইখনেই তাহার সমাপ্তি নহে। এইজন্য র্তাহারা একেবারে মানুষের রাজদরবারে আপনার দূত প্রেরণ করিয়াছেন, বাহিরের দেউড়িতে দ্বারীকে মিষ্টবাক্যে ভুলইয়া কাজ উদ্ধারের সহজ উপায় সন্ধান করিয়া কাজ নষ্ট করেন নাই। র্তাহারা এমন সব কথা বলিয়াছেন যাহা বলিতে কেহ সাহস করে না, এবং সংসারের কাজকর্মের মধ্যে যাহা শুনিবামাত্র মানুষ বিরক্ত হইয়া উঠে, বলিয়া বসে এ সব কথা কোনো কাজের কথাই নহে। কিন্তু কত বড়ো বড়ো কাজের কথা কালের স্রোতে বুদবুদের মতো ফেনাইয়া উঠিল এবং ভাসিতে ভাসিতে ফাটিয়া বিলীন হইয়া গেল, আর যত অসম্ভবই সম্ভব হইল, অভাবনীয়ই সত্য হইল, বুদ্ধিমানের মন্ত্রণা নহে। কিন্তু পাগলের পাগলামিই যুগে যুগে মানুষের অন্তরে, বাহিরে, তাহার চিন্তায় কর্মে, তাহার দর্শনে সাহিত্যে কত নব নব সৃষ্টিবিকাশ করিয়া চলিল তাহার আর অন্ত নাই। তঁহাদের সেই সকল অদ্ভুত কথা ঠেকাইতে গিয়াও কোনোমতেই ঠেকানো যায় না, তাহকে মারিতে চেষ্টা করিলেই আরো অমর হইয়া উঠে, তাহাকে পোড়াইলে সে উজ্জ্বল হয়, তাহাকে পুঁতিয়া ফেলিলে সে অঙ্কুরিত হইয়া দেখা দেয়, তাহাকে সবলে বাধা দিতে গিয়াই আরো নিবিড় করিয়া গ্ৰহণ করিতে হয়- এবং যেন মন্ত্রের বলে কেমন করিয়া দেখিতে দেখিতে নিজের অগোচরে, এমনকি, নিজের অনিচ্ছায়, সেই সকল বাণীর বেদনায় ভাবুক লোকের ভাবের রঙ বদল হইতে থাকে, কাজের লোকের কাজের সূর ফিরিয়া যায়। মহাপুরুষেরা মানুষকে অকুষ্ঠিত কঠে অসাধ্য সাধনেরই উপদেশ দিয়াছেন। মানুষ যেখানেই একটি কোনো বাধায় আসিয়া ঠেকিয়ছে এবং মনে করিয়াছে ইহাই তাহার চরম আশ্রয়, এবং সেইখনেই আপনার * শান্ত্রিকে প্রথাকে একেবারে নিশ্চিইন্দ্ররূপে পাকা করিয়া সনাতন বাসা বঁধিবার চেষ্টা করিয়াছে- সেইখনেই মহাপুরুষেরা আসিয়া গণ্ডি মুছিয়াছেন, বেড়া ভাঙিয়াছো-বলিয়াছেন, পথ এখনাে বাকি, পাথেয়। এখােন শেষ হয় নাই, যে অমৃতভবন তোমার আপনি ঘর তোমার চরমলোক সে তোমাদের এই মিস্ক্রির হাতের গড় পাথরের দেওয়াল দিয়া প্রস্তুত নহে, তাহা পরিবর্তিত হয়। কিন্তু ভাঙেনা, তাহা আশ্রয় দেয়। কিন্তু আবদ্ধ করে না, তাহা নির্মিত হয় না- বিকশিত হয়, সঞ্চিত হয় না-সঞ্চারিত হয়, তাহা কৌশলের কারুকার্যনহে-- তাহা অক্ষয় জীবনের অক্লান্ত সৃষ্টি। মানুষ বলে- সেই পথযাত্রা আমার অসাধ্য, কেননা আমি দুর্বল আর্চ শ্ৰান্ত ;ষ্ঠাহীরা বলেন- এইখানে স্থির হইয়া থাকাই তোমার অসাধ্য, কেননা তুমি মানুষ, তুমি মহৎ, তু