পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

abs p द्री-ब्रष्नांबी চাহিতেছে, আবার সে দেখিতেছে নিজত্বকে হাড়িয়া রিক্ত হইলে কেবল নিজত্বই হারানাে হয় সর্বত্বকে পাওয়া যায় না। জীবনের কাজ আরম্ভ হইবার এই তো লক্ষণ। এমনি করিয়া দুই ধাক্কার মধ্যে পড়িয়া মাঝখানের সত্য পথটি আমাদের জাতীয় জীবনে চিহ্নিত হইয়া যাইবে এবং এই কথা উপলব্ধি করিব যে স্বজাতির মধ্য দিয়াই সর্বজাতিকে ও সর্বজাতির মধ্য দিয়াই স্বজাতিকে সত্যরূপে পাওয়া যায়- এই কথা নিশ্চিতরূপেই বুঝিবে যে, আপনাকে ত্যাগ করিয়া পরকে চাহিতে যাওয়া যেমন নিফল ভিক্ষুকতা, পরকে ত্যাগ করিয়া }\0ybr আত্মপরিচয় । - } আমাদের পরিচয়ের একটা ভাগ আছে, যাহা একেবারে পাকা-আমার ইচ্ছা অনুসারে যাহার কোনো নড়াচড় হইবার জো নাই। তাহার আর-একটা ভাগ আছে যাহা আমার স্বেপার্জিত- আমার বিদ্যা ব্যবহার ব্যবসায় বিশ্বাস অনুসারে যাহা আমি বিশেষ করিয়া লাভ করি এবং যাহার পরিবর্তন ঘটা অসম্ভব নহে। যেমন মানুষের প্রকৃতি ; তাহার একটা দিক আছে যাহা মানুষের চিরন্তন, সেইটেই তাহার ভিত্তি— সেইখানে সে উদ্ভিদ ও পশুর সঙ্গে স্বতন্ত্র, কিন্তু তাহার প্রকৃতির আর-একটা দিক আছে যেখানে সে আপনাকে আপনি বিশেষভাবে গড়িয়া তুলিতে পারে— সেইখানেই একজন মানুষের সঙ্গে আর-একজন মানুষের স্বাতন্ত্র্য। মানুষের প্রকৃতির মধ্যে সবই যদি চিরন্তন হয়, কিছুই যদি তাহার নিজে গড়িয়া লইবার না থাকে, আপনার মধ্যে কোথাও যদি সে আপনার ইচ্ছা খাটাইবার জায়গা না পায়। তবে তো সে মাটির ঢেলা ৷ আবার যদি তাহার অতীতকালের কোনো একটা চিরন্তন ধারা না থাকে তাহার সমস্তই যদি আকস্মিক হয় কিংবা নিজের ইচ্ছা অনুসারেই আগাগোড়া আপনাকে যদি তাহার রচনা করিতে হয় তবে সে একটা পাগলামি, একটা আকাশকুসুম। -- মানুষের এই প্রকৃতি অনুসারেই মানুষের পরিচয় । তাহার খানিকটা পাকা খানিকটা কঁচা, তাহার এক জায়গায় ইচ্ছা খাটে না আর-এক জায়গায় ইচ্ছারই সৃজনশালা। মানুষের সমস্ত পরিচয়ই যদি পাকা হয় অথবা তাহার সমস্তই যদি কঁচা হয় তবে দুইই তাহার পক্ষে বিপদ । আমি যে আমারই পরিবারের মানুষ সে আমার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে না। আমার পরিবারের কেহ বা মাতাল, কেহ-বা বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে আসিয়া ঠেকিয়া গেল এবং লোকসমাজেও উচ্চশ্রেণীতে গণ হইল না। এই কারণেই আমি আমার পরিবারিক পরিচয়টাকে একেবারে চাপিয়া যাইতে পারি। কিন্তু তাহ হইলে সত্যকে চাপা দেওয়া হইবে। f কিংবা হয়তো আমাদের পরিবারে পুরুষানুক্রমে কেহ কখনো হাবড়ার পুল পার হয় নাইকিংবা দুইদিন অন্তর গরম জলে স্নান করিয়া আসিয়াছে, তাই বলিয়া আমিও যে পুল পার হইব না কিংবা স্নান-সম্বন্ধে আমাকে কার্পণ্য করতেই হইবে এ কথা মানা যায় না। অবশ্য, আমার সাত পুরুষে যাহা ঘটে নাই অষ্টম পুরুত্নে আমি যদি তাহাই করিয়া বসি, যদি হাবড়ার পূর্ণ পার হইয়া যাই। তবে আমার বংশের সমস্ত মাসিপিসি ও খুড়োজেঠার দল নিশ্চয়ই বিন্যফারিত চক্ষুতারকা ললাটের দিকে তুলিয়া বলিবে, “তুই অমুক গোষ্ঠীতে জন্সিয়াও পুল পারাপারি করিতে শুরু করিয়াছিল! ইহাও আমাদিগকে চক্ষে দেখিতে হইল।” চাই কি লজ্জায় ক্ষোভে ঠাঁহাদের এমন ইচ্ছাও হইতে পারে আমি পুলের অপর পারেই বরাবর থাকিয়া যাই। কিন্তু তবু আমি যে সেই গােষ্ঠীরই ছেলে সে পরিচয়টা পাকা । মা-মাসিরা রাগ করিয়া তাহা স্বীকার না করিলেও পাকা, আমি নিজে অভিমান করিয়া তাহা অস্বীকার্স করিলেও পাকা। বস্তুত পূর্ব-পুরুষগত যোগটা নিত্য, কিন্তু চলাফেরা সম্বন্ধে অভ্যাসটা নিত্য নহে।