পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

੪o8 রবীন্দ্র রচনাবলী । কুঁড়ির মধের সমস্ত পাপড়ি ঘনিষ্ঠ ভাবে মিলিয়া এক হইয়া থাকে- যখন তাহাদের ভেদ ঘটে তখনই ফুল বিকশিত হইয়া উঠে। প্রত্যেক পাপড়ি ভিন্ন ভিন্ন মুখে আপন পথে আপনাকে যখন পূর্ণ করিয়া তোলে তখনই ফুল সার্থক হয়। আজ পরস্পরের সংঘাতে সমস্ত পৃথিবীতেই একটা জাগরণ সঞ্চারিত হইয়াছে বলিয়া বিকাশের অনিবাৰ্থ নিয়মে মনুষ্য-সমাজের স্বাভাবিক পার্থক্যগুলি আত্মরক্ষার জন্য চতুর্দিকে সচেষ্ট্র হইয়া উঠিয়াছে। আপনাকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করিয়া অন্যের সঙ্গে একেবারে মিলিয়া গিয়া যে বড়ো হওয়া তাহাকে কোনো জাগ্ৰাৎসত্তা বড়ো হওয়া মনে করিতেই পারে না। যে ছোটাে সেও যখনই আপনার সত্যকার স্বাতন্ত্র্য সম্বন্ধে সচেতন হইয়া উঠে তখনই সেটিকে বঁাচাইয়া রাখিবার জন্য প্ৰাণপণ করে- ইহাই প্ৰাণের ধর্ম। বস্তুত সে ছােটাে হইয়াও বীচিতে চায়, বড়ো হইয়া মরিতে চায় না। ফিনরা যদি কোনোক্রমে রুশ হইয়া যাইতে পারে তবে অনেক উৎপাত হইতে তাহারা পরিত্রাণ পায়— তবে একটি বড়ো জাতির শামিল হইয়া গিয়া ছোটাে ত্বর সমস্ত দুঃখ একেবারে দূর হইয়া যায়। কোনো-একটা নেশনের মধ্যে কোনোপ্রকার দ্বিধা থাকিলেই তাহাতে বলক্ষয় করে এই আশঙ্কায় ফিনল্যান্ডকে রাশিয়ার সঙ্গে বলপূর্বক অভিন্ন করিয়া দেওয়াই রুশের অভিপ্রায়। কিন্তু ফিনল্যান্ডের ভিন্নতা যে একটা সত্য পদার্থ; রাশিয়ার সুবিধার কাছে সে আপনাকে বলি দিতে চায় না। এই ভিন্নতাকে যথোচিত উপায়ে বশ করিতে চেষ্টা করা চলে, এক করিতে চেষ্টা করা হত্যা করার মতো অন্যায়। আয়ার্লন্ডকে লইয়াও ইংলন্ডের সেই সংকট । সেখানে সুবিধার সঙ্গে সত্যের লড়াই চলিতেছে। আজ পৃথিবীর নানা স্থানেই যে এই সমস্যা দেখা যাইতেছে তাহার একমাত্র কারণ সমস্ত পৃথিবীতেই একটা প্ৰাণের বেগ সঞ্চারিত হইয়াছে। আমাদের বাংলাদেশের সমাজের মধ্যে সম্প্রতি যে ছােটােখাটাে একটি বিপ্লব দেখা দিয়াছে তাহারও মূল কথাটি সেই একই। ইতিপূর্বে এ দেশে ব্ৰাহ্মণ ও শূদ্র এই দুই মোটা ভাগ ছিল। ব্ৰাহ্মণ ছিল উপরে, আর সকলেই ছিল তলায় পড়িয়া । কিন্তু যখনই নানা কারণে আমাদের দেশের মধ্যে একটা উদবোধন উপস্থিত হইল। তখনই অব্রাহ্মণ জাতিরা শূদ্র শ্রেণীর এক-সমতল হীনতার মধ্যে একাকার হইয়া থাকিতে রাজি হইল না। কায়স্থ আপনার যে একটি বিশেষত্ব অনুভব করিতেছে তাহাতে সে আপনাকে শূদ্ৰত্বের মধ্যে বিলুপ্ত করিয়া রাখিতে পারে না। তাহার হীনতা সত্য নহে। সুতরাং সামাজিক শ্রেণীবন্ধনের অতি প্রাচীন সুবিধাকে সে চিরকাল মানিবে কেমন করিয়া ? ইহাতে দেশাচার যদি বিরুদ্ধ হয় তবে দেশাচারকে পরাভূত হইতেই হইবে। আমাদের দেশের সকল জাতির মধ্যেই এই বিপ্লব ব্যাপ্ত হইবে। কেননা, মূৰ্ছবস্থা ঘুচিলেই মানুষ সত্যকে অনুভব করে ; সত্যকে অনুভব করিবামাত্র সে কোনো কৃত্রিম সুবিধার দাসত্ববন্ধন স্বীকার করিতে পারে না, বরঞ্চ সে অসুবিধা ও অশান্তিকেও বরণ করিয়া লইতে রাজি হয়। ] ইহার ফল কী ? ইহার ফল এই যে, স্বাতন্ত্র্যের গৌরববােধ জন্মিলেই মানুষ দুঃখ স্বীকার করিয়াও আপনাকে বড়ো করিয়া তুলিতে চাহিবে । বড়ো হইয়া উঠিলে তখনই পরস্পরের মিলন সত্যকার সামগ্ৰী । হইবে। দীনতার মিলন, অধীনতার মিলন, এবং দায়ে পড়িয়া মিলন গোজামিলন মাত্র। মনে আছে আমারই কোনো ব্যাকরণঘটিত প্ৰবন্ধ লইয়া একবার সাহিত্যপরিষৎ সভায় এমন একটি আলোচনা উঠিয়ছিল যে, বাংলাভাষাকে যতদূর সম্ভব সংস্কৃতের মতো করিয়া তোলা উচিত- কারণ, তাহা হইলে গুজরাটি মারাঠা সকলেরই পক্ষে বাংলা ভাষা সুগম হইবে। অবশ্য এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে বাংলা ভাষার যে একটি নিজত্ব আছে অন্য দেশবাসীর পক্ষে বাংলা ভাষা বুঝিবার সেইটেই প্রধান বাধা। অথচ বাংলা ভাষার যাহা কিছু শক্তি যাহা-কিছু সৌন্দৰ্য সমস্তই তাহার সেই নিজত্ব লইয়া । আজ ভারতের পশ্চিমতমপ্ৰান্তবাসী গুজরাটি বাংলা পড়িয়া বাংলা সাহিত্য নিজের ভাষায় অনুবাদ করিতেছে। ইহার কারণ এ নয় যে, বাংলা ভাবটা সংস্কৃতের কৃত্রিম ছাচোলা সর্বপ্রকার বিশেষত্ব-বর্জিত সহজ ভাষা । সঁওতাল যদি বাঙালি পাঠকের কাছে তাহার লেখা চলিত হইবে আশা করিয়া নিজের ভাষা হইতে সমস্ত সঁওতালিত্ব বর্জন করে তবেই কি তাহার সাহিত্য আমাদের কাছে আদর পাইবে ? BB DBDD B BB KD DDBS D DBBBDuBD DDD DBuBB DBD BDBDD DBB S অতএব, বাঙালি বাংলা ভাষার বিশেষত্ব অবলম্বন করিয়াই সাহিত্যের যদি উন্নতি করে তবেই