পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় । ७२» BHBuDDDBBB DBBBDD DS BDBDDD DBDS DB BDBDuDuDDDD BBBS দামে বেশি, তাহা সাত্বিক। আমি সেই অনাড়ম্বরের কথা বলিতেছি। যাহা পূর্ণতারই একটি ভাব, যাহা আড়ম্বরের অভাবমাত্র নহে। সেই ভাবের যেদিন আবির্ভাব হইবে সেদিন সভ্যতার আকাশ হইতে । বস্তুকুয়াশার বিস্তর কলুষ দেখিতে দেখিতে কাটিয়া যাইবে। সেই ভাবের অভাব আছে বলিয়া যেসব জিনিস প্রত্যেক মানুষের পক্ষে একান্ত আবশ্যক তাহা দুর্মুল্য ও দুর্ভর হইতেছে ; গান রাজনা, আহার-বিহার, আমোদ-আহলাদ, শিক্ষা-দীক্ষা, রাজ্যশাসন, আইন-আদালত সভ্য দেশে সমন্তই অতি জটিল, সমস্তই মানুষের বাহিরের ও ভিতরের প্রভূত জায়গা জুড়িয়া বসে; এই বোঝার অধিকাংশই অনাবশ্যক- এই বিপুল ভার বহনে মানুষের জোর প্রকাশ পায় বটে, ক্ষমতা প্রকাশ পায় না, এইজন্য বর্তমান সভ্যতাকে যে-দেবতা বাহির হইতে দেখিতেছেন তিনি দেখিতেছেন ইহা অপটু দৈত্যের সীতার দেওয়ার মতো, তার : হাত-পা ছোড়ায় জল ঘুলাইয়া ফেনাইয়া উঠিতেছে ; সে জানেও না। এত বেশি ইসফাস করার যথার্থ প্রয়োজন নাই। মুশকিল। এই যে, দৈত্যটার দৃঢ় বিশ্বাস যে প্রচণ্ড জোরে হাত-পা ছোড়াটারই একটা বিশেষ মূল্য আছে। যেদিন পূর্ণতার সরল সত্য সভ্যতার অন্তরের মধ্যে আবির্ভূত হইবে সেদিন পাশ্চাত্য । বৈঠকখানার দেয়াল হইতে জাপানি পাখা, চীনাবাসন, হরিণের শিং, বাঘের চামড়া- তার এ কোণ ও কোণ হইতে বিচিত্র নিরর্থকতা দুঃস্বপ্নের মতো চুটিয়া যাইবে ; মেয়েদের মাথারটুপিগুলা হইতে মরা পাখি, পাখির পালক ও নকল ফুল পাতা এবং রাশিরাশি অদ্ভুত জঞ্জাল খসিয়া পড়বে; তাদের সাজসজ্জার অমিতাচার বর্বরতার পুরাতত্ত্বে স্থান পাইবে, যে সব পাচতলা দশতলা বাড়ি আকাশের আলোর দিকে ঘুষি তুলিয়া দাড়াইয়াছে তারা লজ্জায় মাথা হেঁট করিবে ; শিক্ষা বলো, কর্ম বলো, ভোগ বলে, সহজ হইয়া ওঠাকেই আপনার শক্তির সত্য পরিচয় বলিয়া গণ্য করবে।; এবং মানুষের অন্তর প্রকৃতি বাহিরের দাসরাজদের রাজত্ব কড়িয়া লইয়া তাহাদিগকে পায়ের তলায় বসাইয়া রাখিবো। একদিন পশ্চিমের মৈত্ৰেয়ীকেও বলিতে হইবে, যেনাহং নােমৃতস্যাম কিমহং তেন। কুর্যম। সে কবে হইবেঠিক জানি না। ততদিন ঘােড় হেঁট করিয়া আমাদিগকে উপদেশ শুনিতে হইবে যে, প্রভূত আসবাবের মধ্যে বড়ো বাড়ির উচ্চতলায় বসিয়া শিক্ষাই উচ্চশিক্ষা। কারণ মাটির তলাটাই মানুষের প্রাইমারি, ঐটেই প্ৰাথমিক ; ইটের কোটা যত বড়ো হা করিয়া হাই তুলিবে বিদ্যা ততই উপরে উঠতে থাকিবে । একদা বন্ধুরা আমার সেই মেঠো বিদ্যালয়ের সঙ্গে একটা কলেজ জুড়িবার পরামর্শ দিয়াছিলেন। কিন্তু একদিন আমাদের দেশের যে উচ্চশিক্ষা তরুতলকে অশ্রদ্ধা করে নাই আজ তাকে তৃণাসন দেখাইলে সে কি সহিতে পরিবে ? সে যে ধনী পশ্চিমের পোষ্যপুত্র, বিলিতি বাপের কায়দায় সে বােপকেও ছাড়াইয়া চলিতে চায়। যতই বলি-না কেন, শিক্ষাটাকে যতদূর পারি উচ্চেই রাখিব, কায়দােটাকে আমাদের মতো করিতে দাও- সে কথায় কেহ কান দেয় না। বলে কিনা, ঐ কায়দাঁটাই তো শিক্ষা, তাই তোমাদের ভালোর জন্যই । ঐ কায়দাটাকে যথাসাধ্য দুঃসাধ্য করিয়া তুলিব। কাজেই আমাকে বলিতে হইল, অন্তঃকরণকেই আমি বড়ো বলিয়া মানি, উপকরণকে তার চেয়েও বড়ো বলিয়া মানিব না। : উপকরণ যে অংশে অন্তঃকরণের অনুচর সে অংশে তাকে অমান্য করা দীনতা এ কথা জানি। কিন্তু সেই সামঞ্জস্যটাকে যুরোপ এখনো বাহির করিতে পারে নাই; বাহির করিবার চেষ্টা করিতেছে। আমাদের নিজের মতে আমাদিগকেও সেই চেষ্টা করিতে কোন পাকা নিয়ম করিয়া বাধা দেওয়া হইবে ? প্রয়োজনকে খর্ব না করিয়াও সমস্তটাকেও সাদাসিধা করিয়া তুলিব সে আমাদের নিজের স্বভাব ও নিজের গরজ অনুসারে। শিক্ষার বিষয়কে আমরা অন্য জায়গা হইতে লইতে পারি। কিন্তু মেজাজটাকে সুদ্ধ লইতে হইবে সে যে বিষম পূর্বেই বলিয়াছি, পশ্চিমের পােষ্যপুত্র তার বিলিতি বােপকেও ছাড়াইয়া চলে। আমেরিকায় দেখিলাম, স্টেটের সাহায্যে কত বড়ো বড়ো বিদ্যালয় চলিতেছে যেখানে ছাত্রদের বেতন নাই বলিলেই হয়। যুরোপেও দরিদ্র ছাত্রদের জন্য সুলভ শিক্ষার উপায় অনেক আছে। কেবল গরিব বলিয়াই আমাদের দেশের শিক্ষা আমাদের সামর্থের তুলনায় পশ্চিমের চেয়ে এত বেশি দুর্মুল্য হইল ? অথচ এই ভারতবর্ষেই একদিন বিদ্যা । àli80