পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@br রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বড়ো ঘর বড়োর ভান করে মাত্র, আসল বড়োকে বাইরে ঠেকিয়ে রাখে অবজ্ঞায় । আমার ছোটো ঘর বড়োর ভান করে না । অসীমের প্রতিযোগিতার স্পর্ধা তার নেই ধনী ঘরের মূঢ় ছেলের মতো । আকাশের শখ ঘরে মেটাতে চাই নে ; তাকে পেতে চাই তার স্বস্থানে, পেতে চাই বাইরে পূর্ণভাবে। বেশ লাগছে । দূর আমার কাছেই এসেছে। জানলার পাশেই বসে বসে ভাবিদূর বলে যে পদার্থ সে সুন্দর। মনে ভাবি সুন্দরের মধ্যেই দূর । পরিচয়ের সীমার মধ্যে থেকেও সুন্দর যায় সব সীমাকে এড়িয়ে । প্রয়োজনের সঙ্গে লেগে থেকেও থাকে আলগা, প্রতিদিনের মাঝখানে থেকেও সে চিরদিনের । মনে পড়ে একদিন মাঠ বেয়ে চলেছিলেম পালকিতে অপরাহুে ; কাহার ছিল আটজন । তার মধ্যে একজনকে দেখলেম যেন কালো পাথরে কাটা দেবতার মূর্তি ; আপন কর্মের অপমানকে প্রতিপদে সে চলছিল। পেরিয়ে ছিন্ন শিকল পায়ে নিয়ে পাখি। যেমন যায় উড়ে । দেবতা তার সৌন্দর্যে তাকে দিয়েছেন সুদূরতার সম্মান । এই দূর আকাশ সকল মানুষেরই অন্তরতম ; জানিলা বন্ধ, দেখতে পাইনে । বিষয়ীর সংসার আসক্তি তার প্রাচীর, যাকে চায় তাকে রুদ্ধ করে কাছের বন্ধনে । ভুলে যায় আসক্তি নষ্ট করে প্রেমকে, আগাছা যেমন ফসলকে মারে চেপে । আমি লিখি কবিতা, আঁকি ছবি । দূরকে নিয়ে সেই আমার খেলা ; দূরকে সাজাই নানা সাজে, আকাশের কবি যেমন দিগন্তকে সাজায় সকালে সন্ধ্যায় । , কিছু কাজ করি তাতে লাভ নেই, তাতে লোভ নেই, তাতে আমি নেই।