পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় । 驿 WRł স্মৃতিশক্তির জোরে যে ভাগ্যবানরা এমনতরো কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড করিতে পারে তারা শেষ পর্যন্ত উদ্ধার পাইয়া যায়- কিন্তু যাদের মেধা সাধারণ মানুষের মাপে প্রমাণসই তাদের কাছে এতটা আশা করাই যায় না। তারা এই রুদ্ধ ভাষার ফাকের মধ্য দিয়া গালিয়া পার হইতেও পারে না, ডিঙাইয়া পার হওয়াও তাঁহাদের পক্ষে অসাধ্য । এখন কথাটা এই, এই যে সব বাঙালির ছেলে স্বাভাবিক বা আকস্মিক কারণে ইংরেজি ভাষা দখল করিতে পারিল না তারা কি এমন কিছু মারাত্মক অপরাধ করিয়াছে যেজন্য তারা বিদ্যামন্দির হইতে যাবজীবন আন্ডামানে চালান হইবার যোগ ? ইংলন্ডে একদিন ছিল যখন সামান্য কলাটা মুলাটা চুরি করলেও মানুষের ফাঁসি হইতে পারিত— কিন্তু এ যে তার চেয়েও কড়া আইন। এ যে চুরি করিতে পারে না। বলিয়াই ফাঁসি কেননা মুখস্থ করিয়া পাস করাই তো চৌর্যবৃত্তি। যে ছেলে পরীক্ষাশালায় গোপনে বই লইয়া যায় তাকে খেদাইয়া দেওয়া হয় ; আর যে ছেলে তার চেয়েও লুকাইয়া লয়, অর্থাৎ চাদরের মধ্যে না লইয়া মগজের মধ্যে লইয়া যায় সেই বা কম কী করল ? সভ্যতার নিয়ম অনুসারে মানুষের স্মরণশক্তির মহলটা ছাপাখানায় অধিকার করিয়াছে। অতএব যারা বই মুখস্থ করিয়া পাস করে তারা অসভ্যরকমে চুরি করে অথচ সভ্যতার যুগে পুরস্কার পাইবে তারাই ? যাই হােক ভাগ্যক্রমে যারা পার হইল তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করিতে চাই না । কিন্তু যারা পার হইল না তাদের পক্ষে হাবড়ার পুলটাই নাহয় দু-ফাকি হইল, কিন্তু কোনোরকমের সরকারি খেয়াও কি তাদের কপালে জুটিবে না ? স্টীমার না হয় তো পানসি ? ভালোমত ইংরেজি শিখিতে পারিল না। এমন ঢের ঢের ভালো ছেলে বাংলাদেশে আছে। তাদের শিখিবার আকাঙক্ষা ও উদ্যমকে একেবারে গােড়ার দিকেই আটক করিয়া দিয়া দেশের শক্তির কি প্রভূত অপব্যয় করা হইতেছে না ? আমার প্রশ্ন এই, প্রেপারেটরি ক্লাস পর্যন্ত একরকম পড়াইয়া তার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোড়টার কাছে যদি ইংরেজি বাংলা দুটাে বড়ো রাস্তা খুলিয়া দেওয়া যায় তা হইলে কি নানাপ্রকারে সুবিধা হয় না ? এক তো ভিড়ের চাপ কিছু কমেই, দ্বিতীয়ত শিক্ষার বিস্তার অনেক বাড়ে। ইংরেজি রাস্তাটার দিকেই বেশি লোক কুঁকিবে তা জানি ; এবং দুটা রাস্তার চলাচল ঠিক সহজ অবস্থায় পীে ছিতে কিছু সময়ও লাগিবে। রাজভাষার দর বেশি সুতরাং আদরও বেশি। কেবল চাকরির বাজারে নয়, বিবাহের বাজারেও বরের মূল্যবৃদ্ধি ঐ রান্তটাতেই। তাই হােক-বাংলা ভাষা অনাদর সহিতে রাজি, কিন্তু অকৃতাৰ্থতা সহ্য করা কঠিন। ভাগমন্তের ছেলে ধাত্রীস্তন্যে মোটাসোটা হইয়া উঠুক-না। কিন্তু গরিবের ছেলেকে তার মাতৃস্তন্য হইতে বঞ্চিত করা কেন ? অনেকদিন হইতে অনেক মারা খাইয়াছি বলিয়া সাবধানে কথা বলিবার চেষ্টা করিয়া থাকি। তবু অভ্যাসদোষে বেফাঁস কথা। আপনি বাহির হইয়া পড়ে। আমার তো মনে হয়, গোড়ায় কথাটা আমি বেশ । কৌশলেই পাড়িয়ছিলাম। নিজেকে বুঝাইয়াছিলাম গোপাল অতি সুবোধ ছেলে, তাকে কম খাইতে দিলেও সে চেঁচামেচি করে না। তাই মৃদুস্বরে শুরু করিয়ছিলাম আজকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরঙ্গনে যে একটা বক্তৃতার বৈঠক বসিয়াছে তারই এককোণে বাংলার একটা আসন পাতিলে জায়গায় কুলইয়া যাইবে। এ কথাটা গোপালের মতোই কথা হইয়াছিল ; ইহাতে অভিভাবকেরা যদি বা নারাজ হন তবু বিরক্ত হইবেন। R কিন্তু গোপালের সুবুদ্ধির চেয়ে যখন তার ক্ষুধা বাড়িয়া ওঠে তখন তার সুর আপনি চড়িতে থাকে ; আমার প্রস্তাবটা অনেকখানি বড়ো হইয়া উঠিয়াছে। তার ফল প্রস্তাবের পক্ষেও সাংঘাতিক হইতে পারে, প্রস্তাবকের পক্ষেও সেটা নূতন নয়। শুনিয়হি আমাদের দেশে শিশুমৃত্যুসংখ্যা খুব বেশি। এ দেশে শতকরা একশো পঁচিশটা প্রস্তাব আঁতুড়ঘরেই মরে। আর সংঘাতিক মাির এবয়সে এত খাইয়াছি যে, ও জিনিসটাকে नारशांटिक- दजिब्रां qकयiद्धई विचन कब्रि नां । আমি জানি তর্ক এই উঠিবে তুমি বাংলা ভাবার যোগে উচ্চশিক্ষা দিতে চাও কিন্তু বাংলাভাষায় উচুদরের শিক্ষাগ্রন্থ কই ? নাই সে কথা মানি কিন্তু শিক্ষা না চলিলে শিক্ষাগ্ৰন্থ হয় কী উপায়ে ? শিক্ষাগ্ৰন্থ বাগানের