পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় e VS আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় হইতেও আমরা সেই ডিগ্ৰীর টাঁকশালার ছাপ লওয়াকেই বিদ্যালােভ বলিয়া গণ্য করিয়াছি। ইহা আমাদের অভ্যাস হইয়া গেছে। আমরা বিদ্যা পাই বা না পাই বিদ্যালয়ের একটা ইচ পাইয়াছি। আমাদের মুশকিল। এই যে, আমরা চিরদিন ইচের উপাসক। ছাঁচে ঢালাই করা রীতিনীতি চালচলনকেই নানা আকারে পূজার অর্ঘ্য দিয়া এই ইচ-দেবীর প্রতি অচলা ভক্তি আমাদের মজাগত । সেইজন্য ছাঁচে-ঢালা বিদ্যাটাকে আমরা দেবীর বরদান বলিয়া মাথায় করিয়া লই— ইহার চেয়ে বড়ো কিছু আছে। এ কথা মনে করাও আমাদের পক্ষে শক্ত । তাই বলিতেছি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি একটা বাংলা অঙ্গের সৃষ্টি হয় তার প্রতি বাঙালি DBDDBDB BB DD DBBBD DDB BDBSSB DS DDBB BBBD DD DD DBDB DDD পড়িতেছে এমন ছেলে এখানে পাওয়া যাইবে। কিন্তু আমার মনে হয় তার চেয়ে একটা বড়ো সুবিধার কথা আছে | সে সুবিধাটি এই যে, এই অংশেই বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনভাবে ও স্বাভাবিকরূপে নিজেকে সৃষ্টি করিয়া তুলিতে পারবে। তার একটা কারণ, এই অংশের শিক্ষা অনেকটা পরিমাণে বাজার-দরের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইবে । আমাদের অনেককেই ব্যাবসার খাতিরে জীবিকার দায়ে ডিগ্ৰী লইতেই হয়- কিন্তু সে পথ যাদের অগত্যা বন্ধ কিংবা যারা শিক্ষার জন্যই শিখিতে চাহিবে তারাই এই বাংলা বিভাগে আকৃষ্ট হইবে। শুধু তাই নয় যারা দায়ে পড়িয়া ডিগ্ৰী লাইতেছে তারাও অবকাশমত বাংলা ভাষার টানে এই বিভাগে আনাগােনা করিতে ছাড়িবে না। কারণ, দুদিন না। যাইতেই দেখা যাইবে এই বিভাগেই আমাদের দেশের অধ্যাপকদের প্রতিভার বিকাশ হইবে। এখন ধারা কেবল ইংরেজি শব্দের প্রতিশব্দ ও নােটের ধূলা উড়াইয়া আঁধি লাগাইয়া দেন তঁরাই সেদিন ধারাবর্ষণে বাংলার তৃষিত চিত্ত জুড়াইয়া দিবেন। এমনি করিয়া যাহা সজীব তাহা ক্ৰমে কলকে আচ্ছন্ন করিয়া নিজের স্বাভাবিক সফলতাকে প্রমাণ করিয়া তুলিবে । একদিন ইংরেজিশিক্ষিত বাঙালি নিজের ইংরেজি লেখার অভিমানে বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করিয়াছিল, কিন্তু কোথা হইতে নব বাংলাসাহিত্যের ছোটাে একটি অন্ধুর বাংলার হৃদয়ের ভিতর হইতে গজাইয়া উঠিল; তখন তার ক্ষুদ্রতাকে তার দুর্বলতাকে পরিহাস করা সহজ ছিল ; কিন্তু সে যে সজীব, । ছোটাে হইলেও উপেক্ষার সামগ্ৰী নয় ; আজ সে মাথা তুলিয়া বাঙালির ইংরেজি রচনাকে অবজ্ঞা করিবার সামৰ্থ্য লাভ করিয়াছে। অথচ বাংলাসাহিত্যের কোনো পরিচয় কোনো আদর রাজদ্বারে ছিল না- আমাদের মতাে অধীন জাতির পক্ষে সেই প্রলোভনের অভাব কম অভাব নয়—বাহিরে সেই সমস্ত অনাদরকে গণ্য না করিয়া বিলাতি বাজারের যাচনদারের দৃষ্টির বাহিরে কেবলমাত্র নিজের প্রাণের আনন্দেই সে আজ পৃথিবীতে চিরপ্রতিষ্ঠা লাভের যোগ্য হইতেছে। এতদিন ধরিয়া আমাদের সাহিত্যিকেরা যদি ইংরেজি কপিবুক নকল করিয়া আসিতেন তাহা হইলে জগতে যে প্রভূত আবর্জনার সৃষ্টি হইত। তাহা কল্পনা করিলেও १ोश ऊँी निशा ७? । ..I এতদিন ধরিয়া ইংরেজি বিদ্যার যে কলটা চলিতেছে সেটাকে মিস্ত্ৰিখানার যোগে বদল করা আমাদের সাধ্যায়ত্ত নহে। তার দুটাে কারণ আছে, এক, কলটা একটা বিশেষ ছাচে গড়া, একেবারে গোড়া হইতে সে ইচ বদল করা সোজা কথা নয়। দ্বিতীয়ত, এই ছাচের প্রতি ছাচ-উপাসকদের ভক্তি এত সুদৃঢ় যে, আমরা ন্যাশনাল কলেজই করি আর হিন্দুয়ুনিভার্সিটিই করি আমাদের মন কিছুতেই ঐ ছাচের মুঠা হইতে মুক্তি পায় না । ইহার সংস্কারের একটিমাত্র উপায় আছে- এই ছাচের পাশে একটা সজীব জিনিসকে অল্প একটু স্থান দেওয়া । তাহা হইলে সে তর্ক না করিয়া বিরোধ না করিয়া কলকে আচ্ছন্ন করিয়া একদিন মাথা তুলিয়া উঠিবে এবং কল যখন আকাশে ধোয় উড়াইয়া ঘর্ঘর শব্দে হাটের জন্য মালের বস্তা উদগীর করিতে থাকিবে তখন এই বনস্পতি নিঃশব্দে দেশকে ফল দিবে, ছায়া দিবে এবং দেশের সমস্ত কলাভাষী বিহঙ্গদলকে নিজের শাখায় শাখায় আশ্রয়দান করিবে । কিন্তু ঐ কলটার সঙ্গে রফা করিবার কথাই বা কেন বলা ? ওটা দেশের আপিস আদালত, পুলিসের থানা, জেলখানা, পাগলাগরিদ, জাহাজের জেটি, পাটের কল প্রভৃতি আধুনিক সভ্যতার আসবাকের শামিল হইয়া থাকি-না। আমাদের দেশ যেখানে ফল চাহিতেছে হায়া চাহিতেছে সেখানে কোঠাবাড়িগুলা ছাড়িয়া একবার