পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কর্তার ইচ্ছায় কর্ম is a ধৰ্মতন্ত্র বলে, মানুষকে নির্দয়ভাবে অশ্ৰদ্ধা করিবার বিস্তারিত নিয়মাবলী যদি নিখুঁত করিয়া না মান তবে ধর্মস্রষ্ট হইবে। ধর্ম বলে, জীবকে নিরর্থক কষ্ট যে দেয় সে আত্মাকেই হনন করে। কিন্তু ধৰ্মতন্ত্র বলে, যত অসহ্য কষ্টই হােক, বিধবা মেয়ের মুখে যে বাপ মা বিশেষ তিথিতে অন্নজল তুলিয়া দেয় সে পাপকে লালন করে। ধর্ম বলে, অনুশোচনা ও কল্যাণকর্মর দ্বারা অন্তরে বহিরে পাপের শোধন। কিন্তু ধৰ্মতন্ত্র বলে, গ্রহণের দিনে বিশেষ জলে ডুব দিলে, কেবল নিজের নয়, চোদপুরুষের পাপ উদ্ধার। ধর্ম বলে, সাগরগিরি পার হইয়া পৃথিবীটাকে দেখিয়ালও, তাতেই মনের বিকাশ। ধর্মতত্ত্ব বলে, সমুদ্র যদি পােরাপার কর তবে খুব লম্বা করিয়া নাকে খত দিতে হইবে। ধর্ম বলে, যে মানুষ যথার্থ মানুষ সে যে-ঘরেই জন্মাক পূজনীয়। ধৰ্মতন্ত্র বলে, যে মানুষ ব্ৰাহ্মণ সে যতবড়ো অভাজনই হােক মাথায় পা তুলিবার যোগ্য। অর্থাৎ মুক্তির মন্ত্র পড়ে ধর্ম আর দাসত্বের মন্ত্র পড়ে ধর্মতত্ত্ব। আমি জানি একদিন একজন রাজা কলিকাতায় আর-এক রাজার সঙ্গে দেখা করিতে গিয়াছিলেন। বাড়ি ধার তিনি কলেজে পাস করা সুশিক্ষিত। অতিথি যখন দেখা সারিয়া গাড়িতে উঠিবেন এমন সময় বাড়ি র্যার তিনি রাজার কাপড় ধরিয়া টানিলেন, বলিলেন, “আপনার মুখে পান!" গাড়ি ধীর তিনি দায়ে পড়িয়া মুখের পান ফেলিলেন, কেননা সারথি মুসলমান। এ কথা জিজ্ঞাসা করিবার অধিকারই নাই। “সারথি যেই হোক মুখের পান ফেলা যায় কেন ? ধর্মবুদ্ধিতে বা কর্মবুদ্ধিতে কোথাও কিছুমাত্র আটক না খাইলেও গাড়িতে বসিয়া স্বচ্ছন্দে পান খাইবার স্বাধীনতাটুকু যে দেশের মানুষ অনায়াসে বর্জন করিতে প্ৰস্তুত সে দেশের লোক স্বাধীনতার অন্ত্যেষ্টিসৎকার করিয়াছে। অথচ দেখি যারা গোড়ায় কোপ দেয়। তারাই আগায় জল ঢালিবার ta RV 隐 নিষ্ঠা পদার্থের একটা শোভা আছে। কোনো কোনো বিদেশী এ দেশে আসিয়া সেই শোভার ব্যাখ্যা করেন। এটাকে বাহির হইতে র্তারা সেইভাবেই দেখেন একজন আর্টিস্ট পুরানাে ভাঙা বাড়ির চিত্ৰযোগ্যতা যেমন করিয়া দেখে, তার বাসযোগ্যতার খবর লয় না। স্নানযাত্রার পরবে বরিশাল হইতে কলিকাতায় আসিতে গঙ্গাস্নানের যাত্রী দেখিয়ছি, তার বেশির ভাগ স্ত্রীলোক। স্টীমারের ঘাটে ঘাটে, রেলওয়ের স্টেশনে স্টেশনে তাদের কষ্ট্রের অপমানের সীমা ছিল না। বাহিরের দিক হইতে এই ব্যাকুল সহিষ্ণুতার সৌন্দৰ্য আছে। কিন্তু আমাদের দেশের অন্তৰ্যামী এই অন্ধনিষ্ঠার সৌন্দর্যকে গ্রহণ করেন নাই। তিনি পুরস্কার দিলেন না, শক্তিই দিলেন। দুঃখ বাড়িতেই চলিল। এই মেয়েরা মানত স্বন্ত্যয়নের বেড়ার মধ্যে যে-সব ছেলে মানুষ করিয়াছে ইহকালের সমস্ত বস্তুর কাছেই তারা মাথা ঠোঁট করিল এবং পরকালের সমন্ত ছায়ার কাছেই তারা মাথা খুঁড়িতে লাগিল। নিজের কাজের বাধাকে রাস্তার বঁাকে ধাঁকে গাড়িয়া দেওয়াই এদের কাজ, এবং নিজের উন্নতির অন্তরায়কে আকাশপরিমাণ উচু করিয়া তোলাকেই এরা বলে উন্নতি। সত্যের জন্য মানুষ কষ্ট সহিবে এইটেই সুন্দর। কানা-বুদ্ধি কিংবা খোড়ী-শক্তির হােত হইতে মানুষ লেশমাত্র কষ্ট যদি সয় তবে সেটা কুদৃশ্য। কারণ, বিধাতা আমাদের সবচেয়ে বড়ো যে সম্পদ দিয়াছেন-ত্যাগ-স্বীকারের বীরত্ব- এই কষ্ট তারই বেহিসাবি বাজে খরচ । আজ তারই নিকাশ আমাদের চলিতেছে- ইহার ঋণের কার্দটাই মোটা । চোখের সামনে দেখিয়াহি হাজার হাজার মেয়েপুরুষ পুণ্যের সন্ধানে যে পথ দিয়া স্নানে চলিয়াছে ঠিক তারই ধাৱে মাটিতে পড়িয়া একটি বিদেশী রোগী মরিল, সে কোন জাতের মানুষ জানা ছিল না বলিয়া কেহ তাহাকোইল না। এই তো ঋণদায়ে দেউলিয়ার লক্ষণ। এই কষ্টসহিষ্ণু পূণ্যকামীদের নিষ্ঠা দেখিতে সুন্দর কিন্তু ইহার লোকসান সর্বানশে। যে অন্ধতা মানুষকে পুণ্যের জন্য জলে স্নান করিতে ছোেটায় সেই অন্ধতাই তাকে অজানা মুমূর্তু সেবায় নিরন্ত করে। একলব্য পরম নিষ্ঠুর প্রোণাচাৰ্যক তার বুড়া আঙুলকাটিয়া দিল, কিন্তু এই অস্তুনিষ্ঠার দ্বারা সে নিজের চিরজীবনের তপস্যাফল হইতে তার সমস্ত আপন জনকে বঞ্চিত BB BD DuuDuDuDBuBDDBDBS uDD DB DBDBBD BBiLS DBD DD DDD দানের অবমাননা। গয়াতীর্থে দেখা গেছে, যে-পাণ্ডার না আছে বিদ্যা, না আছে চরিত্র, ধনী সীলোক রাশি রাশি টাকা ঢালিয়া দিয়া তার পা পূজা করিয়াছে। সেই সময়ে আর ভক্তিবিহ্বলতা ভাবুকের চোখে সুন্দর কিন্তু এই অবিচলিত নিষ্ঠা, এই অপরিমিত বদন্যতা কি সত্য দয়ার পথে এই গ্ৰীলোককে এক-পা অগ্রসর করিয়াছে ? ইহার উত্তর এই যে, তৰু তো সে টাকাটা খরচ করিতেছে ; সে যদি পাণ্ডাকে পবিত্র বলিয়া না