পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় چاو পথে ও পথের প্রান্তে ২৭ । তুলনীয় শেষ সপ্তক ১৫২৩ অন্য কথা পরে হবে, গোড়াতেই বলে রাখি তুমি যে চা পাঠিয়েছিলে সেটা খুব ভালো । এতদিন যে লিখি নি সেটা আমার স্বভাবের বিশেষত্বাবশত। যেমন আমার ছবি আঁকা তেমনি আমার চিঠি লেখা। একটা যা-হয়-কিছু মাথায় আসে সেটা লিখে ফেলি, প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় ছােটাে বড়ো যে-সব খবর জেগে ওঠে তার সঙ্গে কোনো যোগ নেই। আমার ছবিও ঐরকম । যা-হয়-কোনো-একটা রূপ মনের মধ্যে হঠাৎ দেখতে পাই, চার দিকের কোনো-কিছুর সঙ্গে তার সাদৃশ্য বা সংলগ্নতা থাক বা না থাক । আমাদের ভিতরের দিকে সর্বদা একটা ভাঙাগড়া চলাফেরা জোড়াতাড়া চলছেই; কিছু বা ভাব, কিছু বা ছবি নানারকম চেহারা ধরছে।--তারই সঙ্গে আমার কলমের কারবার । এর আগে আমার মন আকাশে কান পেতে ছিল, বাতাস থেকে সুর আসত, কথা শুনতে পেত, আজকাল সে আছে চোখ মেলে রূপের রাজ্যে, রেখার ভিড়ের মধ্যে । গাছপালার দিকে তাকাই, তাদের অত্যন্ত দেখতে পাই- স্পষ্ট বুঝতে পারি জগৎটা আকারের মহাযাত্ৰা । আমার কলমেও আসতে চায় সেই আকারের লীলা । আবেগ নয়, ভাব নয়, চিন্তা নয়, রূপের সমাবেশ । আশ্চর্য এই যে তাতে গভীর আনন্দ । ভারি নেশা । আজকাল রেখায় আমাকে পেয়ে বসেছে । তার হাত ছাড়াতে পারছি নে । কেবলি তার পরিচয় পাচ্ছি। নতুন নতুন ভঙ্গির মধ্যে দিয়ে । তার রহস্যের অন্ত নেই। যে বিধাতা ছবি আঁকেন এতদিন পরে তঁর মনের কথা জানতে পারছি। অসীম অব্যক্ত, রেখায় রেখায় আপন নতুন নতুন সীমা রচনা করছেন- আয়তনে সেই সীমা কিন্তু বৈচিত্র্যে সে অন্তহীন । আর কিছু নয়, সুনির্দিষ্টতাতেই যথার্থ সম্পূর্ণতা । অমিতা যখন সুমিতাকে পায় তখন সে চরিতার্থ হয় । ছবিতে যে আনন্দ, সে হচ্ছে সুপরিমিতির আনন্দ, রেখায় সংযমে সুনির্দিষ্টকে সুস্পষ্ট করে দেখি- মন বলে ওঠে, নিশ্চিত দেখতে পেলুম— তা সে যাকেই দেখি-না কেন, এক টুকরো পাথর, একটা গাধা, একটা কঁাটাগাছ, একজন বুড়ি, যাই হােক । নিশ্চিত দেখতে পাই যেখানেই, সেখানেই অসীমকে স্পর্শ করি, আনন্দিত হয়ে উঠি । তাই বলে এ কথা ভুললে চলবে না যে তোমার চা খুব ভালো লেগেছে। ইতি ১৩ অগ্রহায়ণ ১৩৩৫ এই প্রসঙ্গে শেষ সপ্তকের তেইশ ও চৌত্ৰিশ –সংখ্যক কবিতার সহিত প্ৰান্তিক (১৩৪৪) গ্রন্থের পনেরো ও ষোলো -সংখ্যক কবিতা তুলনীয়। কবিতা দুইটি নিম্নে মুদ্রিত হইল । প্রান্তিক ১৫ । তুলনীয় শেষ সপ্তক ২৩ অবরুদ্ধ ছিল বায়ু ; দৈত্যসম পুঞ্জ মেঘভার অভিভূত আলোকের মূৰ্ছাতুর স্নান অসম্মানে দিগন্ত আছিল বাষ্পাকুল । যেন চেয়ে ভূমিপানে অবসাদে অবনত ক্ষীণশ্বাস চির প্রাচীনতা স্তব্ধ হয়ে আছে বসে দীর্ঘকাল, ভুলে গেছে কথা, ক্লান্তিভারে আঁখিপাতা বদ্ধপ্রায় । শূন্যে হেনকালে জয়শঙ্খ উঠিল বাজিয়া । চন্দনীতিলক ভালে শরৎ উঠিল হেসে চমকিত গগন-প্ৰাঙ্গণে ; পল্লবে পল্লবে কঁপি বনলক্ষ্মী কিঙ্কিণী কঙ্কণে বিছুরিল দিকে দিকে জ্যোতিষ্কণা ৷ আজি হেরি চোখে কোন অনির্বচনীয় নবীনেরে তরুণ আলোকে । sl80