পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VAO রবীন্দ্র-রচনাবলী যেন আমি তীর্থযাত্রী অতিদূর ভবীিকাল হতে মন্ত্রবলে এসেছি। ভাসিয়া । উজান স্বপ্নের স্রোতে অকস্মাৎ উত্তরিনু বৰ্তমান শতাব্দীর ঘাটে যেন এই মুহুর্তেই । চেয়ে চেয়ে বেলা মোর কাটে । আপনারে দেখি আমি আপনি বাহিরে, যেন আমি অপর যুগের কোনো অজানিত, সদ্য গেছে নামি সত্তা হতে প্রত্যহের আচ্ছাদন। অক্লান্ত বিস্ময় যার পানে চক্ষু মেলি তারে যেন আঁকডিয়া রয় পুষ্পলগ্ন ভ্রমরের মতো । এই তো ছুটির কাল, সর্ব দেহ,মন হতুে ছিন্ন হল অভ্যাসের জাল, নগ্ন চিত্ত মগ্ন হল সমস্তের মাঝে । মনে ভাবি, পুরানোর দুৰ্গদ্বারে মৃত্যু যেন খুলে দিল চাবি, নূতন বাহির এল ; তুচ্ছতার জীর্ণ উত্তরীয় ঘুচাল সে ; অস্তিত্বের পূর্ণ মূল্যে কী অভাবনীয় প্রকাশিল তার স্পর্শে, রজনীর মীেন সুবিপুল প্ৰভাতের গানে সে মিশায়ে দিল ; কালো তার চুল পশ্চিমদিগন্তপারে নামহীন বন-নীলিমায় বিস্তারিল রহস্য নিবিড় । আজি মুক্তিমন্ত্র গায় আমার বক্ষের মাঝে দূরের পথিকচিত্ত মম, সংসারযাত্রার প্রান্তে সহমরণের বধূসম । প্রান্তিক ১৬ । তুলনীয় শেষ সপ্তক ৩৪ পথিক দেখেছি আমি পুরাণে কীর্তিত কত দেশ কীর্তি-নিঃস্ব আজি ; দেখছি অবমানিত ভগ্নশেষ বজাঘাতে স্তব্ধ যেন অট্টহাসি ; বিরাট সম্মান সাষ্টাঙ্গে সে ধুলায় প্ৰণত, যে ধূলার পরে মেলে সন্ধ্যাবেল ভিক্ষু জীৰ্ণ কথা, যে ধূলায় চিহ্ন ফেলে শ্ৰান্ত পদ পথিকের, পুনঃ সেই চিহ্ন লোপ করে অসংখ্যের নিত্য পদপাতে। দেখিলাম বালুস্তরে প্রচ্ছন্ন সুদূর যুগান্তর, ধূসর সমুদ্রতলে যেন মগ্ন মহাতরী অকস্মাৎ ঝঞাবর্তবলে লয়ে তার সব ভাষা, সর্বদিনরাজনীর আশা, মুখরিত ক্ষুধাতৃষ্ণা, বাসনা-প্ৰদীপ্ত ভালোবাসা । তবু করি অনুভব বসি এই অনিত্যের বুকে অসীমের হৃৎস্পন্দন তরঙ্গিছে মোর দুঃখে সুখে । শেষ সপ্তকের সাতাশ-সংখ্যক কবিতার একটি পূর্বরূপ সংযোজন অংশে (ঘট ভরা, পৃ. ১২৪) মুদ্রিত হইয়াছে। পাণ্ডুলিপি হইতে অন্য একটি পাঠ নিম্নে মুদ্রিত হইল :