পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্ৰন্থপরিচয় VS করিতেন। রাজপুত-মহিলাদের চিতাপ্রবেশের যে একটা দৃশ্য আছে, তাহাতে পূর্বে আমি গদ্যে একটা বক্তৃতা রচনা করিয়া দিয়াছিলাম। যখন এই স্থানটা পড়িয়া পুফ দেখা হইতেছিল, তখন রবীন্দ্রনাথ পাশের ঘরে পড়াশুনা বন্ধ করিয়া চুপ করিয়া বসিয়া শুনিতেছিলেন । গদ্যরচনাটি এখানে একেবারেই খাপ খায় নাই বুঝিয়া কিশোর রবি একেবারে আমাদের ঘরে আসিয়া হাজির । তিনি বলিলেন, এখানে পদ্য রচনা ছাড়া কিছুতেই জোর বাধিতে পারে না। প্রস্তাবটা আমি উপেক্ষা করিতে পারিলাম না- কারণ, প্রথম হইতেই আমারও মনটা কেমন খুঁত খুঁত করিতেছিল। কিন্তু এখন আর সময় কই ? আমি সময়াভাবের আপত্তি উত্থাপন করিলে, রবীন্দ্রনাথ সেই বক্তৃতাটির পরিবর্তে একটা গান রচনা করিয়া দিবার ভার লইলেন এবং তখনই খুব অল্প সময়ের মধ্যে জ্বল জ্বল চিতা দ্বিগুণ দ্বিগুণ ২৫ এই গানটি রচনা করিয়া আনিয়া। আমাদিগকে চমৎকৃত করিয়া দিলেন ।” —জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি, পৃ. ১৪৭ বিদ্যালয়ত্যাগের পূর্বের ও অব্যবহিত পরের জীবন পূর্বোক্ত আশ্রম-বিদ্যালয়ের সূচনা প্ৰবন্ধের আরম্ভে রবীন্দ্ৰনাথ সংক্ষেপে বর্ণনা করিয়াছেন : ‘জীবনস্মৃতিতে লিখেছি, আমার বয়স যখন অল্প ছিল তখনকার স্কুলের রীতিপ্রকৃতি এবং শিক্ষক ও ছাত্রদের আচরণ আমার পক্ষে নিতান্ত দুঃসহ হয়ে উঠেছিল। তখনকার শিক্ষাবিধির মধ্যে কোনো রস ছিল না, কিন্তু সেইটেই আমার অসহিষ্ণুতার একমাত্র কারণ নয়। কলকাতা শহরে আমি প্রায় বন্দী অবস্থায় ছিলেম। কিন্তু বাড়িতে তবুও বন্ধনের ফাঁকে ফঁাকে বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে আমার একটা আনন্দের সম্বন্ধ জন্মে গিয়েছিল। বাড়ির দক্ষিণ দিকের পুকুরের জলে সকালসন্ধ্যার ছায়া এপার-ওপার করত— হাঁসগুলো দিত সীতার, গুগলি তুলত জলে ডুব দিয়ে, আষাঢ়ে জলে-ভরা নীলবৰ্ণ পুঞ্জ পুঞ্জ মেঘ। সারবাধা নারকেলগাছের মাথার উপরে ঘনিয়ে আনত বর্ষার গভীর সমারোহ। দক্ষিণের দিকে যে বাগানটা ছিল ওইখানেই নানা রঙে ঋতুর পর ঋতুর আমন্ত্রণ আসত উৎসুক দৃষ্টির পথে আমার হৃদয়ের মধ্যে।-- “যখন আমার বয়স তেরো, তখন এডুকেশন-বিভাগীয় দাড়ের শিকল ছিন্ন করে বেরিয়ে পড়েছিলেম । তার পর থেকে যে বিদ্যালয়ে হলেম ভর্তি তাকে যথার্থই বলা যায় বিশ্ববিদ্যালয় । সেখানে আমার ছুটি ছিল না, কেননা অবিশ্রাম কাজের মধ্যেই পেয়েছি। ছুটি । কোনো কোনো দিন পড়েছি। রাত দুটাে পর্যন্ত । তখনকার অপ্রখর আলোকের যুগে রাত্রে সমস্ত পাড়া নিস্তব্ধ, মাঝে মাঝে শোনা যেত। "হরিবোল শ্মশান যাত্রীদের কণ্ঠ থেকে । ভেরেণ্ডা। তেলের সেজের প্রদীপে দুটাে সলতের মধ্যে একটা সলতে নিবিয়ে দিতুম, তাতে শিখার তেজ হ্রাস হত। কিন্তু হত আয়ুবৃদ্ধি। মাঝে মাঝে অন্তঃপুর থেকে বড়দিদি এসে জোর করে ,আমার বই কেড়ে নিয়ে .আমাকে পাঠিয়ে দিতেন বিছানায় । তখন আমি যে-সব বই পড়বার চেষ্টা করেছি। কোনো কোনো গুরুজন তা আমার হাতে দেখে মনে করেছেন স্পর্ধা । শিক্ষার কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে যখন শিক্ষার স্বাধীনতা পেলুম তখন কাজ বেড়ে গেল অনেক বেশি, অথচ ভার গোল কমে।”** —আশ্রমের রূপ ও বিকাশ (১৩৫৮), পৃ. ৩৪-৩৬ । ২৫ গানটি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সরোজিনী নাটক এর (১৮৭৫) অন্তর্গত। দ্রষ্টব্য গীতবিতান, তৃতীয় খণ্ড ২৬ কৃত্তিবাস, কাশীরাম দাস, একত্ৰ-বাধানো বিবিধার্থসংগ্ৰহ, আরব্য উপন্যাস, পারস্য উপন্যাস, বাংলা রবিন্সন ক্রুসো, সুশীলার উপাখ্যান, রাজা প্রতাপাদিত্য রায়ের জীবনচরিত [? বঙ্গাধিপ পরাজয়'], বেতালপঞ্চবিংশতি প্রভৃতি তখনকার কালের গ্রন্থগুলি বিস্তর পাঠ করিয়াছিলাম। - বঙ্কিমচন্দ্ৰ, সাধনা, GKN y Odo y দ্রষ্টব্য রবীন্দ্র-রচনাবলী নবম খণ্ড, গ্ৰন্থপরিচয়, পৃ. ৫৫০ (সুলভ পঞ্চম খণ্ড, গ্ৰন্থপরিচয়, পৃ ৮০৭) জীবনস্মৃতি প্ৰথম পাণ্ডুলিপিতে ‘মৎস্যনারীর গল্প উল্লিখিত হইয়াছে।