পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্ৰন্থপরিচয় ዓo S তখন এই নাটক লিখিবার একটি উপলক্ষ ঘটিয়াছিল । “বৎসরে একবার দেশের সমস্ত সাহিত্যিকগণকে একত্র করিবার অভিপ্ৰায়ে আমাদের বাড়িতে “বিদ্বজনসমাগম’-নামক এক সভা স্থাপিত হইয়াছিল । সেই সম্মিলন উপলক্ষে গান বাজনা আবৃত্তি ও আহারাদি হইত। ‘দ্বিতীয় বৎসরে দাদারা এই সম্মিলনে একটি নাট্যাভিনয় করিবার ইচ্ছা করিলেন। কোন বিষয় অবলম্বন করিয়া নাটক লিখিলে এই সভার উপযুক্ত হইবে তাঁহারই আলোচনাকালে দস্যরত্নাকরের কবি হইবার কাহিনীই সকলের চেয়ে সংগত বলিয়া বোধ হইল। ইহার কিছু পূর্বেই আৰ্যদর্শনে বিহারীলাল চক্রবর্তী মহাশয়ের ‘সারদামঙ্গল সংগীত’ বাহির হইয়া আমাদের সকলকেই মাতাইয়া তুলিয়াছিল। এই কাব্যে বাল্মীকির কাহিনী যেরূপ বৰ্ণিত হইয়াছে তাহারই সঙ্গে দস্য রত্নাকরের বিবরণ জড়াইয়া দিয়া এই নাটকের গল্পটা একরূপ খাড়া হইল। তাহার পর জ্যোতিদাদা বাজাইতে লাগিলেন, আমি গান তৈরি করিতে লাগিলাম এবং অক্ষয়বাবুও মাঝে 'মাঝে যোগ দিলেন । অক্ষয়বাবুর রচিত দুই-তিনটি গান বালীকিপ্রতিভার মধ্যে আছে । “তেতালার ছাদের উপর পাল খাটাইয়া স্টেজ বঁাধিয়া বাল্মীকিপ্ৰতিভার অভিনয় হইল। আমি সাজিয়াছিলাম বাল্মীকি । আমার ভ্রাতুষ্পপুত্রী প্রতিভা সরস্বতী সাজিয়াছিল “বাল্মীকিপ্রতিভার নামের মধ্যে সেই ইতিহাসটুকু রহিয়াছে। দর্শকদের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন[অভিনয়মঞ্চ হইতে আমি তাহাকে চক্ষে দেখিতে পাইলাম না। কিন্তু শুনিতে পাইলাম]**- তিনি খুশি হইয়া গিয়াছিলেন ।” --দ্বিতীয় পাণ্ডুলিপি ও প্রবাসী (পৃ ৩১৯), মাঘ ১৩১৮ গ্রন্থে এই অংশ বর্জিত এবং স্বতন্ত্র ‘বাল্মীকিপ্ৰতিভা’ অধ্যায় সংযোজিত হয় । জ্যোতিরিন্দ্রনাথের সদ্যরচিত সুরের সহিত রবীন্দ্রনাথ ও অক্ষয়চন্দ্রের গান-রচনার পূর্ণতর একটি চিত্র এ স্থলে সংকলিত হইল : “এই সময়ে আমি [ জ্যোতিরিন্দ্রনােথ]। পিয়ানো বাজাইয়া নানাবিধ সুর রচনা করিতাম। আমার দুই পাৰ্থে অক্ষয়চন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথ কাগজ পেন্সিল লইয়া বসিতেন । আমি যেমনি একটি সুর রচনা করিলাম আমনি ইহারা সেই সুরের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ কথা বসাইয়া গান রচনা করিতে লাগিয়া যাইতেন। একটি নূতন সুর তৈরি হইবামাত্র সেটি আরো কয়েকবার বাজাইয়া ইহাদিগকে শুনাইতাম । সেইসময় অক্ষয়চন্দ্র চক্ষু মুদিয়া বৰ্মা সিগার টানিতে টানিতে মনে মনে কথার চিন্তা করিতেন। পরে যখন র্তাহার নাক মুখ দিয়া অজস্রভাবে ধূমপ্রবাহ বহিত তখনি বুঝা যাইত যে, এইবার তাহার মস্তিষ্কের ইঞ্জিন চলিবার উপক্ৰম করিয়াছে। তিনি আমনি বাহ্যজ্ঞানশূন্য হইয়া চুরুটের টুকরাটি সম্মুখে যাহা পাইতেন, এমন-কি, পিয়ানাের উপরেই, তাড়াতাড়ি রাখিয়া দিয়া হাফ ছাড়িয়া হয়েছে হয়েছে বলিতে বলিতে আনন্দদীপ্ত মুখে লিখিতে শুরু করিয়া দিতেন । রবি কিন্তু বরাবর শান্তভাবেই ভাবাবেশে রচনা করিতেন । রবীন্দ্রনাথের চাঞ্চল্য কাচিৎ লক্ষিত হইত। - অক্ষয়ের যত শীঘ্ৰ হইত রবির রচনা তত শীঘ্ৰ হইত না ।” —জ্যোতিরিন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি, পৃ. ১৫৫-৫৬ “সাহিত্যের সঙ্গী পরিচ্ছেদে ৪৬০ পৃষ্ঠায় ‘বউঠাকুরানীর বিহারীলালকে একখানি আসন দিবার কথা উল্লিখিত হইয়াছে। সেই প্রসঙ্গে বিহারীলালের গ্রন্থাবলী হইতে “সাধের আসন কাব্যগ্রন্থের ভূমিকা অংশ নিম্নে উদধূত হইল : ৩০ প্রথম অভিনয়ে শরৎকুমারীদেবীর কন্যা সুশীলদেবী লক্ষ্মী সাজিয়াছিলেন । ৩১। এই অংশ প্রবাসীতে আছে, পাণ্ডুলিপিতে নাই । S86