পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዔOS রবীন্দ্র-রচনাবলী ‘কোনো সম্রান্ত সীমস্তিনী আমার ‘সারদামঙ্গল পাঠে সন্তুষ্ট হইয়া চারি মাস যাবৎ স্বহস্তে বুনিয়া একখানি উৎকৃষ্ট আসন আমাকে উপহার দেন। এই আসনের নাম- “সাধের আসন । সাধের আসনে অতি সুন্দর সুন্দর অক্ষর বুনিয়া সারদামঙ্গল হইতে এই শ্লোকার্ধ উদ্ধৃত করা হইয়াছে- হে যোগেন্দ্ৰ ! যোগাসনে ঢুলু ঢুলু দুনিয়নে বিভোর বিহবল মনে কাহারে ধেয়াও ?** প্রদানকালে আসনদাত্রী উদধূত শ্লোকার্ধের উত্তর চাহেন। আমিও উত্তর লিখিব বলিয়া প্রতিশ্রুত হইয়া আসি এবং বাটিতে আসিয়া তিনটি শ্লোক লিখি । কিছুদিন গত হইলে উত্তর র্তাহার মৃত্যুর পরে উত্তর সাঙ্গ হইয়াছে ! এই ক্ষুদ্র খণ্ডকাব্যের উপহৃত আসনের নামে নাম রহিল- “সাধের আসন ।” : - ‘সাধের আসন রচনার ইতিহাসটি কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য তাহার স্মৃতিকথায় (পুরাতন প্রসঙ্গ', প্রথম পর্যায়, পৃ. ১৭২) এরূপ বর্ণনা করিয়াছেন : তাহাকে পুত্ৰবৎ স্নেহ করিতেন ; দ্বিজেন্দ্রনাথের সহিত র্তাহার ভ্রাতৃবৎ ভাব ছিল । সে পরিবারের মহিলারাও বিহারীকে বিশেষ শ্ৰদ্ধা করিতেন । শ্ৰীযুক্ত জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পত্নী তাঁহাকে স্বহস্তেরচিত একখানি আসন উপহার দিয়াছিলেন। সে-উপলক্ষে বিহারী "সাধের আসন লিখেন ।” —সাহিত্য-সাধক-চরিতমালা ২৫, পৃ. ১৯ “স্বদেশিকতা' অধ্যায়ের সূচনাংশ প্রথম পাণ্ডুলিপিতে এরূপ আছে : “আমাদের পরিবারে শিশুকাল হইতে স্বদেশের জন্য বেদনার মধ্যে আমরা বাড়িয়া উঠিয়াছি। আমাদের পরিবারে বিদেশী প্রথার কতকগুলি বাহ্য অনুকরণ অনেক দিন হইতে প্রবেশ সাগ্নিকের পবিত্র অগ্নির মতো বহুকাল হইতে রক্ষিত হইয়া আসিতেছে। আমাদের পিতৃদেব যখন স্বদেশের প্রচলিত পূজাবিধি পরিত্যাগ করিয়াছিলেন তখনাে তিনি স্বদেশী শাস্ত্রকে ত্যাগ করেন নাই ও স্বদেশী সমাজকে দৃঢ়ভাবে আশ্রয় করিয়া ছিলেন । আমার পিতামহ এবং ছোটোকাকা মহাশয় বিলাতের সমাজে বর্ষাযাপন করিয়া ইংরাজের বেশ পরিয়া আসেন নাই, এই দৃষ্টান্ত আমাদের পরিবারের মধ্যে সজীব হইয়া আছে। বড়দাদা বাল্যকাল হইতে আন্তরিক অনুরাগের সহিত মাতৃভাষাকে জ্ঞান ও ভাব সম্পদে ঐশ্বর্যবান করিবার জন্য প্রস্তুত হইয়াছেন । মেজদাদা বিলাতে গিয়া সিভিলিয়ান হইয়া আসিয়াছেন। কিন্তু তাহার ভাবপ্রকাশের ভাষা বাংলাই রহিয়া গেছে । সেজদাদার অকালে মৃত্যু হইয়াছিল, কিন্তু তিনিও নিজের চেষ্টায় ও মেডিকাল কলেজে অধ্যয়ন করিয়া বিজ্ঞানের যে-পরিমাণ চৰ্চা করিয়াছিলেন তাহা বাংলাভাষায় প্রকাশ পুষ্টিসাধন করিয়া আসিতেছেন । আমাদের পরিবারে পিতৃদেবকে ইংরাজি পত্র লেখা একেবারে নিষিদ্ধ। শুনিয়াছি নূতন আত্মীয়তপাশেবদ্ধ কেহ তাহাকে একবার ইংরাজি পত্র লিখিয়াছিলেন, তাহা ফেরত আসিয়াছিল । আমরা আপনা-আপনির মধ্যে কেহ কহাকে এবং পারাৎপক্ষে কোনো বাঙালিকে ইংরাজিভাষায় পত্র লিখি না- আমাদের এই আচরণটিকে যে বিশেষভাবে ৩২ সারদামঙ্গল, প্ৰথম, সর্গে ১৮শ শ্লোক দ্রষ্টব্য ।