পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (নবম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So রবীন্দ্র-রচনাবলী সভ্যাদিগকে বার্ষিক ৬ টাকা আগামী চান্দা দিতে হইবেক । যে-সভ্য এককালে ১০০ টাকা দিবেন। তাহাকে ওই বার্ষিক চান্দা দিতে হইবেক না । অধিকাংশ উপস্থিত সভ্যোর সম্মতিক্রমে বর্তমান বর্ষের জন্য নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ সমাজের কর্মচারীরূপে নির্বাচিত হইলেন সভাপতি- ডাক্তার রাজেন্দ্রলাল মিত্ৰ । সহযোগী সভাপতি । শ্ৰীবঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ডাক্তার শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর। শ্ৰীদ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর । সম্পাদক । শ্ৰীকৃষ্ণবিহারী সেন । শ্ৰীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । সভাপতিকে ধন্যবাদ দিয়া সভা ভঙ্গ হইল । - -রবীন্দ্রভবনের পাণ্ডুলিপি হইতে “মৃত্যুশোক পরিচ্ছেদে মাতার মৃত্যুর যে স্মৃতিচিত্র রবীন্দ্রনাথ আঁকিয়াছেন তাহার পরিপূরকরূপে সৌদামিনী দেবীর ‘পিতৃস্মৃতি' হইতে সংকলিত হইল : “যে ব্ৰাহ্মমুহুর্তে মাতার মৃত্যু হইয়াছিল। পিতা তাহার পূর্বদিন সন্ধ্যার সময় হিমালয় হইতে বাড়ি ফিরিয়া আসিয়াছিলেন । তাহার পূর্বে মা ক্ষণে ক্ষণে চেতনা হারাইতেছিলেন । পিতা আসিয়াছেন শুনিয়া বলিলেন, “বসতে চৌকি দাও।” পিতা সম্মুখে আসিয়া বসিলেন । মা বলিলেন, “আমি তবে চললেম ।’ আর কিছুই বলিতে পারিলেন না । আমাদের মনে হইল, স্বামীর নিকট হইতে বিদায় লইবার জন্য এ পর্যন্ত তিনি আপনাকে বাচাইয়া রাখিয়াছিলেন । মার মৃত্যুর সাজাইয়া দিয়া বলিলেন, "ছয় বৎসরের সময় এনেছিলেম, আজ বিদায় দিলেম ।’’ —পিতৃস্মৃতি, প্রবাসী, ফাঙ্গুন ১৩১৮, পৃ. ৪৬৩ অপিচ, রবীন্দ্রনাথ, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ’, পৃ. ১৫২-৫৩ উক্ত পরিচ্ছেদে ৫০৮ পৃষ্ঠায় চব্বিশ বছর বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয়” উল্লেখ করা হইয়াছে তাহা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের পত্নী কাদম্বরীদেবীর মৃত্যু (বৈশাখ ১২৯১) । এই প্রসঙ্গে ১৩২৪ সালের ৮ আষাঢ় তারিখে অমিয়চন্দ্ৰ চক্রবতীকে লিখিত কবির একটি পত্রের কিয়দংশ উদধূত হইল : “এক সময়ে যখন আমার বয়স তোমারই মতো ছিল তখন আমি যে নিদারুণ শোক পেয়েছিলুম। সে ঠিক তোমারই মতো । আমার যে-পরমাত্মীয় আত্মহত্যা করে মরেন শিশুকাল থেকে আমার জীবনের পূর্ণ নির্ভর ছিলেন তিনি । তাই তার আকস্মিক মৃত্যুতে আমার পায়ের নীচে থেকে যেন পৃথিবী সরে গেল, আমার আকাশ থেকে আলো নিভে গেল । আমার জগৎ শূন্য হল, আমার জীবনের সাধ চলে গেল । সেই শূন্যতার কুহক কোনোদিন ঘুচিবে, এমন কথা আমি মনে করতে পারি নি । কিন্তু তার পরে সেই প্রচণ্ড বেদনা থেকেই আমার জীবন মুক্তির ক্ষেত্রে প্রথম প্ৰবেশলাভ করলে। আমি ক্ৰমে বুঝতে পারলুম, জীবনকে মৃত্যুর জানলার ভিতর থেকে না দেখলে তাকে সত্যরূপে দেখা যায় না । মৃত্যুর আকাশে জীবনের যে বিরাট মুক্তরূপ প্রকাশ পায় প্রথমে তা বড়ো দুঃসহ। কিন্তু তার পরে তার ঔদার্য মনকে আনন্দ দিতে থাকে । তখন ব্যক্তিগত জীবনের সুখদুঃখ অনন্ত সৃষ্টির ক্ষেত্রে হালকা হয়ে দেখা দেয় ।” —কবিতা, কার্তিক ১৩৪৮ অপিচ, চিঠিপত্র একাদশ খণ্ড, পৃ ৮ রবীন্দ্রনাথের ‘পুষ্পাঞ্জলি’-নামক সমসাময়িক রচনাটিতে সেই বেদনার সদ্য প্রকাশ রহিয়াছে ; রবীন্দ্রভবনে রক্ষিত পাণ্ডুলিপির সহিত মিলাইয়া এ স্থলে তাহা সংকলিত হইল :