পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉○や রবীন্দ্র-রচনাবলী অনেক কাহিনী যাবে যে সেদিন ভূলে, স্মরণচিহ্ন কত যাবে উন্মুলে 5 মোর দেওয়া নাম লেখা থাকৃ ওর ফুলে মধুমঞ্জরিলতা । [ চৈত্র ১৩৩৬ শাস্তিনিকেতন ] নারিকেল সমুদ্রের ধারে জমিতেই নারিকেলের সহজ আবাস। আমাদের আশ্রমের মাঠ সেই সমুদ্রকুল থেকে বহুদূরে। এখানে অনেক যত্বে একটি নারিকেলকে পালন করে তোলা হয়েছে— সে নিঃসঙ্গ নিস্ফল নিস্তেজ । তাকে দেখে মনে হয় সে যেন প্রাণপণে ঋজু হয়ে দাড়িয়ে দিগন্ত অতিক্রম করে কোনো-এক আকাজক্ষার ধনকে দেখবার চেষ্ট৷ করছে। নির্বাসিত তরুর মজ্জার মধ্যে সেই আকাঙ্ক্ষা। এখানে আলোনা মাটিতে সমুদ্রের স্পর্শমাত্র নেই, গাছের শিকড় তার বাঞ্ছিত রস এখানে সন্ধান করছে, পাচ্ছে না ; সে উপবাসী, ধরণীর কাছে তার কান্নার সাড়া মিলছে না। আকাশে উদ্যত হয়ে উঠে তার যে-সন্ধানদৃষ্টিকে সে দিগন্তপারে পাঠাচ্ছে দিনান্তে সন্ধ্যাবেলায় সেই তার সন্ধানেরই সজীব মূর্তির মতো পাখি তার দোদুল্যমান শাখায় প্রতিদিন ফিরে ফিরে আসে । আজ বসন্তে প্রথম কোকিল ডেকে উঠল। দক্ষিণ হাওয়ায় আজ কি সমুদ্রের বাণী এসে পৌছল, যে-বাণী সমুদ্রের কুলে কুলে বধির মাটির সুপ্তিকে নিয়তই অশাস্ত তরঙ্গমন্ত্রে আন্দোলিত করে তুলছে। তাই কি আজ সেই দক্ষিণসমূদ্র থেকে তার তাণ্ডবনৃত্যের স্পর্শ এই গাছের শাখায় শাখায় চঞ্চল। সমুদ্রের রুদ্রডমরুর জাগরণী কি এরই পল্লবমর্মরে তার ক্ষীণ প্রতিধ্বনি জাগিয়েছে । বিরহী তরু কি আজ অপেন অন্তরে সেই সুদূরবন্ধুর বার্তা পেল, যে-বন্ধুর মহাগানে অভিনন্দিত হয়ে কোন অতীত যুগে একদিন কোনো প্রথম নারিকেল প্রাণযাত্রীরূপে জীবলোকে যাত্রা শুরু করেছিল ? সেই যুগারম্ভপ্রভাতের আদিম উৎসবে মহাপ্রাণের যে-স্পর্শপুলক জেগেছিল তাই আজ