পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বনবাণী >○A ফিরে পেয়ে কি ওই গাছটির সংবৎসরের অবসাদ আজ বসন্তে ঘুচল। তার জীবনের জয়পতাকা আবার আজ কি ওই নব-উৎসাহে নীলাম্বরে আন্দোলিত যেন একটা আচ্ছাদন উঠে গেল, তার মজার মধ্যে প্রাণশক্তির যে-আশ্বাসবাণী প্রচ্ছন্ন হয়েছিল তাকেই আজ কি ফিরে পেলে, যে-বাণী বলছে— ‘চলে প্রাণতীর্থে, জয় করে মৃত্যুকে।’ সমুদ্রের কুল হতে বহুদূরে শব্দহীন মাঠে নিঃসঙ্গ প্রবাস তব নারিকেল,— দিনরাত্রি কাটে ষে-প্রচ্ছন্ন আকাজক্ষয় বুঝিতে পার না তাহা নিজে । দিগন্তেরে অতিক্রমি দেখিতে চাহিছ তুমি কী-যে দীর্ঘ করি দেহ তব, মজ্জায় রয়েছে তার স্মৃতি গৃঢ় হয়ে। মাটির গভীরে যে-রস খুজিছ নিতি কী স্বাদ পাও না তাহে, অন্নে তার কী অভাব অাছে, তাই তো শিকড় উপবাসী কাদে ধরণীর কাছে। আকাশে রয়েছ চেয়ে রাত্রিদিন কিসের প্রত্যাশে বাক্যহারা ! বারবার শূন্ত হতে ফিরে ফিরে আসে তোমারি সন্ধানরূপী সন্ধ্যাবেলাকার শ্রাস্ত পাখি লম্বিত শাখায় তব । ঐ শুন উঠিয়াছে ডাকি বসন্তের প্রথম কোকিল । সে বাণী কি এল প্রাণে দক্ষিণপবন হতে যে-বাণী সমুদ্র শুধু জানে ; পৃথিবীর কুলে কুলে যে-বাণী গম্ভীর আন্দোলনে বধির মাটির স্বপ্তি কাপায়ে তুলিছে প্রতিক্ষণে অশাস্ততরঙ্গমন্দ্রে, দক্ষিণসাগর হতে একি তাণ্ডবনৃত্যের স্পর্শ শাখার হিল্লোলে তব দেখি মুহুমুহু চঞ্চলিত। রুদ্রডমরুর জাগরণী পল্লবমর্মরে তব পেয়েছে কি ক্ষীণ প্রতিধ্বনি । কান পেতে ছিলে তুমি,– হে বিরহী, বসন্তে কি আজি স্বদুরবন্ধুর বার্তা অস্তরে উঠল তব বাজি,—