পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বসন্ত ৩২৩ কবি । হা মহারাজ, তারাসুদ্ধ হয়তো পলাতকার দলে যোগ দিতে পারেন। তাতে দোষ কী হয়েছে। ফাঙ্কন-যে পড়েছে। রাজা । সর্বনাশ ! এখানে এসে যদি আবার— কবি। ভয় নেই। শূন্তকোষের কথাটা স্মরণ করিয়ে দেবার ভারই মন্ত্রীদের বটে, কিন্তু শূন্তকোষের কথা ভুলিয়ে দেবার ভারই তো কবির উপরে। রাজা । তাহলে ভালো কথা । তাহলে আর দেরি নয়। ভোলবার অত্যন্ত দরকার হয়েছে । দলবল সব প্রস্তুত তো ? আমাদের নাট্যাচার্য দিনপতি— কবি । ওই তো তিনি ভারতীর কমলবনের মধুগন্ধে বিহ্বল হয়ে বসে আছেন । রাজা। দেখে মনে হচ্ছে বটে শূন্ত রাজকোষের কথায় ওঁর কিছুমাত্র খেয়াল নেই। কবি । উনি আমাদের উৎসবের বন্ধু, দুর্ভিক্ষের দিনে ওঁকে না হলে চলে না। কারণ উনি ক্ষুধার কথা সুধা দিয়ে ভোলান। রাজা। সাধু! আমার মন্ত্রীদের সঙ্গে ওঁর পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। বিশেষত আমার অর্থসচিবের সঙ্গে । তিনি অত্যন্ত গম্ভীর হয়ে আছেন । র্তার মনে যদি পুলক সঞ্চার করতে পারেন তাহলে— কবি । ফস করে বেশি অাশা দিয়ে ফেলবেন না— রাজকোষের অবস্থা যে রকম— রাজা । হা হা, বটে বটে।—আচ্ছা, তবে তোমার পালা আরম্ভ হবে কী দিয়ে । কবি । ঋতুরাজ আসবেন, প্রস্তুত হবার জন্তে আকাশে একটা ডাক পড়েছে। রাজা । বলছে কী । কবি । বলছে, সব দিয়ে ফেলতে হবে । রাজা। নিজেকে একেবারে শূন্ত ক’রে ? সর্বনাশ ! কবি । না, নিজেকে পুর্ণ ক’রে। নইলে দেওয়া তো ফাকি দেওয়া । রাজা । মানে কী হ’ল । কবি । যে-দেওয়া সত্যি, সে দেওয়াতে ভরতি করে। বসন্ত-উৎসবে দানের দ্বারাই ধরণী ধনী হয়ে উঠবে। রাজা । তাহলে ধরণীর সঙ্গে ধরণীপতির ওইখানে অমিল দেখতে পাচ্ছি। আমি তো দান করতে গিয়ে প্রায়ই বিপদে পড়ি— অর্থসচিবের মুখ অত্যন্ত গম্ভীর হতে থাকে । التي কবি। যে-দান সত্য তার দ্বারা বাইরের ধন বিনাশ পায়, অস্তরের ধন বিকাশ পেতে থাকে ।