পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রক্তকরবী ©8ግ অধ্যাপক। সকালে ফুলের বনে যে আলো আসে তাতে বিস্ময় নেই, কিন্তু পাকা দেয়ালের ফাটল দিয়ে যে আলো আসে সে আর-এক কথা । যক্ষপুরে তুমি সেই আচমকা আলো । তুমিই বা এখানকার কথা কী ভাবছ বলে দেখি । নন্দিনী । অবাক হয়ে দেখছি, সমস্ত শহর মাটির তলাটার মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে অন্ধকার হাতড়ে বেড়াচ্ছে। পাতালে সুড়ঙ্গ খুদে তোমরা ধক্ষের ধন বের করে করে আনছ। সে যে অনেক যুগের মরা ধন, পৃথিবী তাকে কবর দিয়ে রেখেছিল। অধ্যাপক। আমরা-যে সেই মরা ধনের শবসাধনা করি । তার প্রেতকে বশ করতে চাই। সোনার তালের তালবেতালকে বাধতে পারলে পৃথিবীকে পাব মুঠোর মধ্যে । h নন্দিনী। তার পরে আবার, তোমাদের রাজাকে এই একটা অদ্ভূত জালের দেয়ালের আড়ালে ঢাকা দিয়ে রেখেছ, লে-যে মানুষ পাছে সে-কথা ধরা পড়ে। তোমাদের ওই সুড়ঙ্গের অন্ধকার ডালাটা খুলে ফেলে তার মধ্যে আলো ঢেলে দিতে ইচ্ছে করে, তেমনি ইচ্ছে করে ওই বিত্র জালটাকে ছিড়ে ফেলে মানুষটাকে উদ্ধার করি । অধ্যাপক। আমাদের মরা ধনের প্রেতের যেমন ভয়ংকর শক্তি, আমাদের মাতুষছাকা রাজারও তেমনি ভয়ংকর প্রতাপ । নন্দিনী । এ-সব তোমাদের বানিয়ে-তোলা কথা । 噶 অধ্যাপক। বানিয়ে-তোলাই তো । উলঙ্গের কোনো পরিচয় নেই, বানিয়েতোলা কাপড়েই কেউ-বা রাজা, কেউ-বা ভিখিরী। এসো আমার ঘরে। তোমাকে তত্ত্বকথা বুঝিয়ে দিতে বড়ো আনন্দ হয়। নন্দিনী। তোমাদের খোদাইকর যেমন খনি খুদে খুদে মাটির মধ্যে তলিয়ে চলেছে, তুমিও তো তেমনি দিনরাত পুথির মধ্যে গর্ত খুড়েই চলেছ। আমাকে নিয়ে সময়ের বাজে খরচ করবে কেন । অধ্যাপক। আমরা নিরেট নিরবকাশ-গর্তের পতঙ্গ, ঘন কাজের মধ্যে সেঁধিয়ে আছি ; তুমি ফাক সময়ের আকাশে সন্ধ্যাতারাটি, তোমাকে দেখে আমাদের ডানা চঞ্চল হয়ে ওঠে। এসো আমার ঘরে, তোমাকে নিয়ে একটু সময় নষ্ট করতে দাও। নন্দিনী । না না, এখন না। আমি এসেছি তোমাদের রাজাকে তার ঘরের মধ্যে গিয়ে দেখব । অধ্যাপক। সে থাকে জালের আড়ালে, ঘরের মধ্যে ঢুকতে দেবে না। নন্দিনী । আমি জালের বাধা মানি নে, আমি এসেছি ঘরের মধ্যে ঢুকতে ।