পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৫২ রবীন্দ্র-রচনাবলী তৰু বলি, সোনার পিও কি তোমার ওই হাতের আশ্চর্য ছন্দে সাড়া দেয়, যেমন সাড়া দিতে পারে ধানের খেত। আচ্ছা রাজা, বলো তো, পৃথিবীর এই মরা ধন দিনরাত নাড়াচাড়া করতে তোমার ভয় হয় না ? নেপথ্যে। কেন, ভয় কিসের । নন্দিনী। পৃথিবী আপনার প্রাণের জিনিস আপনি খুশী হয়ে দেয়। কিন্তু যখন তার বুক চিরে মরা হাড়গুলোকে ঐশ্বর্য বলে ছিনিয়ে নিয়ে আস, তখন অন্ধকার থেকে একটা কানা রাক্ষসের অভিসম্পাত নিয়ে আস। দেখছ না, এখানে সবাই যেন কেমন রেগে আছে, কিম্বা সন্দেহ করছে, কিম্বা ভয় পাচ্ছে ? নেপথ্যে । অভিসম্পাত ? নন্দিনী । হা, খুনোখুনি কাড়াকড়ির অভিসম্পাত। নেপথ্যে । শাপের কথা জানি নে । এ জানি যে আমরা শক্তি নিয়ে আসি । আমার শক্তিতে তুমি খুশী হও, নন্দিন ? নন্দিনী । ভারি খুশি লাগে । তাই তো বলছি আলোতে বেরিয়ে এসো, মাটির উপর পা দাও, পৃথিবী খুশী হয়ে উঠুক। আলোর খুশি উঠল জেগে ধানের শিষে শিশির লেগে, ধরার খুশি ধরে না গো, ওই-যে উথলে, মরি, হায় হায় হায় । নেপথ্যে । নন্দিনী, তুমি কি জান, বিধাতা তোমাকেও রূপের মায়ার আড়ালে অপরূপ ক’রে রেখেছেন? তার মধ্যে থেকে ছিনিয়ে তোমাকে আমার মুঠোর ভিতর পেতে চাচ্ছি, কিছুতেই ধরতে পারছি নে। আমি তোমাকে উলটিয়ে পালটিয়ে দেখতে চাই, না পারি তো ভেঙেচুরে ফেলতে চাই। নন্দিনী। ও কী বলছ তুমি। ... নেপথ্যে। তোমার ওই রক্তকরবীর আভাটুকু ছেকে নিয়ে আমার চোখে অঞ্জন ক’রে পরতে পারি নে কেন । সামান্য পাপড়িকটা আঁচল চাপা দিয়ে বাধা দিয়েছে। তেমনি বাধা তোমার মধ্যে— কোমল ব’লেই কঠিন । আচ্ছা নন্দিনী, আমাকে কী মনে কর, খুলে বলে তো । নন্দিনী । সে আরেক দিন বলব। আজ তো তোমার সময় নেই, আজ যাই । নেপথ্যে । না না, যেয়ে না, বলে যাও ; আমাকে কী মনে কর বলো ।