পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রক্তকরবী 9@@ বিশু । সেই নীল চাদোয়ার নিচে, খোলা মদের আড়ায় । রাস্ত বন্ধ। তাই তো এই কয়েদখানার চোরাই মদের ওপর এমন ভয়ংকর টান। আমাদের না আছে আকাশ, না আছে অবকাশ ; তাই বারো ঘণ্টার সমস্ত হাসি গান সূর্যের আলো কড়া করে চুইয়ে নিয়েছি একচুমুকের তরল আগুনে। যেমন ঠাস দাসত্ব তেমনি নিবিড় ছুটি । তোর সূর্য ছিল গহন মেঘের মাঝে, তোর দিন মরেছে অকাজেরি কাজে, তবে আসুক-না সেই তিমিররাতি, লুপ্তিনেশার চরম সাথী, তোর ক্লান্ত আঁখি দিক সে ঢাকি দিকভোলাবার ঘোরে। চন্দ্র। যাই বল বিশুবেয়াই, যক্ষপুরীতে এসে তোমরাই মজেছ । আমাদের মেয়েদের তো কিছু বদল হয় নি। বিশু। হয় নি তো কী। তোমাদের ফুল গেছে শুকিয়ে, এখন ‘সোনা সোনা’ করে প্রাণটা খাবি থাচ্ছে। চন্দ্রা । কথখনো না । বিশু। আমি বলছি ‘ই’ । ওই যে ফাগু হতভাগা বারো ঘণ্টার পরে আরো চার ঘণ্ট। যোগ করে খেটে মরে, তার কারণটা ফাগুও জানে না, তুমিও জান ন। অন্তৰ্বামী জানেন । তোমার সোনার স্বপ্ন ভিতরে-ভিতরে ওকে চাবুক মারে, সে চাৰুক সর্দারের চাবুকের চেয়েও কড়া। 蟲 চন্দ্রা। আচ্ছা বেশ, তা চলো-না কেন, এখান থেকে দেশে ফিরে যাই । বিশু । সর্দার কেবল-যে ফেরবার পথ বন্ধ করেছে তা নয়, ইচ্ছেটা সুদ্ধ আটকেছে । আজ যদি-বা দেশে যাও টিকতে পারবে না, কালই সোনার নেশায় ছুটে ফিরে আসবে, আফিমখোর পাখি যেমন ছাড়া পেলেও খাচায় ফেরে। ফাগুলাল। আচ্ছা ভাই বিশু, তুমি তো একদিন পুথি পড়ে পড়ে চোখ খোয়াতে বসেছিলে, তোমাকে আমাদের মতো মুখুদের সঙ্গে কোদাল ধরালে কেন । চন্দ্র। এতদিন আছি, এই কথাটির জবাব বেয়াই-এর কাছ থেকে কিছুতেই আদায় করা গেল না । ফাগুলাল। অথচ কথাটা সবাই জানে।