পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রক্তকরবী \ՖԳ ծ নেপথ্যে । একটা মরা ব্যাঙ। নন্দিনী । কী করবে ওকে নিয়ে। নেপথ্যে। এই ব্যাঙ একদিন একটা পাথরের কোটরের মধ্যে ঢুকেছিল। তারি আড়ালে তিন হাজার বছর ছিল টিকে । এইভাবে কী করে টিকে থাকতে হয় তারি রহস্য ওর কাছ থেকে শিখছিলুম ; কী করে বেঁচে থাকতে হয় তা ও জানে না। আজ আর ভালো লাগল না, পাথরের আড়াল ভেঙে ফেললুম, নিরস্তর টিকে-থাকার থেকে ওকে দিলুম মুক্তি। ভালো খবর নয় ? নন্দিনী । আমারো চারিদিক থেকে তোমার পাথরের দুর্গ আজ খুলে যাবে। আমি জানি, আজ রঞ্জনের সঙ্গে দেখা হবে। নেপথ্যে । তোমাদের দুজনকে তখন একসঙ্গে দেখতে চাই। নন্দিনী । জালের আড়ালে তোমার চশমার ভিতর দিয়ে দেখতে পাবে না । নেপথ্যে। ঘরের ভিতরে বসিয়ে দেখব । নন্দিনী । তাতে কী হবে। নেপথ্যে । আমি জানতে চাই । নন্দিনী । তুমি যখন জানবার কথা বল, কেমন ভয় করে। নেপথ্যে । কেন । নন্দিনী । মনে হয়, যে-জিনিসটাকে মন দিয়ে জানা যায় না, প্রাণ দিয়ে বোঝা যায়, তার পরে তোমার দরদ নেই। নেপথ্যে । তাকে বিশ্বাস করতে সাহস হয় না, পাছে ঠকি । যাও তুমি, সময় নষ্ট কোরো না – ন না, একটু রোসে । তোমার অলকের থেকে ওই যে রক্তকরবীর গুচ্ছ গালের কাছে নেমে পড়েছে, আমাকে দাও । নন্দিনী । এ নিয়ে কী হবে। নেপথ্যে । ওই ফুলের গুচ্ছ দেখি আর মনে হয়, ওই যেন আমারি রক্ত আলোর শনিগ্রহ ফুলের রূপ ধরে এসেছে । কখনো ইচ্ছে করছে, তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে ছিড়ে ফেলি, আবার ভাবছি, নন্দিনী যদি কোনোদিন নিজের হাতে ওই মঞ্জরি আমার মাথায় পরিয়ে দেয়, তা হলে— নন্দিনী । তা-হলে কী হবে। নেপথ্যে । তা-হলে হয়তো আমি সহজে মরতে পারব। নন্দিনী । একজন মানুষ রক্তকরবী ভালোবাসে, আমি তাকে মনে করে ওই ফুলে আমার কানের দুল করেছি।