পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ৪২৩ লেখাটা কার । তোমার বুঝি ? ওগো, তেমন যত্ন ক'রে আমাকে আর কে দেখবে, আমার দিকে কে মুখ তুলে চাইবে গো — তোরা একটুকু থাম, মেলা চেঁচাস নে, কথাটা শুনতে দে। ওগো, আমি কেন আগে গেলুম না গো— আমি কেন বেঁচে রইলুম।” রামকানাই মনে-মনে নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, “সে আমাদের কপালের দোষ ।” বাড়ি ফিরিয়া গিয়া নবদ্বীপের মা রামকানাইকে লইয়া পড়িলেন । বোঝাই গাড়ি সমেত খাদের মধ্যে পড়িয়া হতভাগ্য বলদ গাড়োয়ানের সহস্র গুতা খাইয়াও অনেকক্ষণ যেমন নিরুপায় নিশ্চল ভাবে দাড়াইয়া থাকে, রামকানাই তেমনি অনেকক্ষণ চুপ করিয়া সহ করিলেন,– অবশেষে কাতরস্বরে কহিলেন, “আমার অপরাধ কী। আমি তো দাদা নই।” নবদ্বীপের মা ফোস করিয়া উঠিয়া বলিলেন, “না, তুমি বড়ো ভালো মানুষ, তুমি কিছু বোঝ না ; দাদা বললেন লেখো’, ভাই অমনি লিখে গেলেন । তোমরা সবাই সমান। তুমিও সময়কালে ওই কীর্তি করবে বলে বসে আছ। আমি মলেই কোন পোড়ারমুখী ডাইনীকে ঘরে আনবে— আর আমার সোনার-চাদ নবদ্বীপকে পাথরে ভাসাবে । কিন্তু সেজন্যে ভেবো না, আমি শিগগির মরছি নে ৷” এইরূপে রামকানাইয়ের ভাবী অত্যাচারের আলোচনা করিয়া গৃহিণী উত্তরোত্তর অধিকতর অসহিষ্ণু হইয়া উঠিতে লাগিলেন। রামকানাই নিশ্চয় জানিতেন, যদি এইসকল উৎকট কাল্পনিক আশঙ্কা নিবারণ-উদ্দেশে ইহার তিলমাত্র প্রতিবাদ করেন, তবে হিতে বিপরীত হইবে। এই ভয়ে অপরাধীর মতো চুপ করিয়া রহিলেন, যেন কাজটা করিয়া ফেলিয়াছেন। যেন তিনি সোনার নবদ্বীপকে বিষয় হইতে বঞ্চিত করিয়া র্তাহার ভাবী দ্বিতীয়পক্ষকে সমস্ত লিখিয়া দিয়া মরিয়া বসিয়া আছেন, এখন অপরাধ স্বীকার না করিয়া কোনো গতি নাই । ইতিমধ্যে নবদ্বীপ তাহার বুদ্ধিমান বন্ধুদের সহিত অনেক পরামর্শ করিয়া মাকে আসিয়া বলিল, “কোনো ভাবনা নাই। এ-বিষয় আমিই পাইব । কিছুদিনের মতো বাবাকে এখান হইতে স্থানান্তরিত করা চাই । তিনি থাকিলে সমস্ত ভণ্ডুল হইয়া যাইবে।” নবদ্বীপের বাবার বুদ্ধিমুদ্ধির প্রতি নবদ্বীপের মার কিছুমাত্র শ্রদ্ধা ছিল না ; সুতরাং কথাটা তারো যুক্তিযুক্ত মনে হইল। অবশেষে মার তাড়নায় এই নিতান্ত অনাবশ্বক নির্বোধ কর্মনাশা বাবা একটা যেমন-তেমন ছল করিয়া কিছুদিনের মতে কাশীতে গিয়া আশ্রয় লইলেন । অল্পদিনের মধ্যেই বরদাসুন্দরী এবং নবদ্বীপচন্দ্র পরস্পরের নামে উইলজালের