পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8¢ २ রবীন্দ্র-রচনাবলী গুহাহিত উপনিষৎ তাকে বলেছেন— গুহাহিতং গহবরেষ্ঠং— অর্থাৎ তিনি গুপ্ত, তিনি গভীর। তাকে শুধু বাইরে দেখা যায় না, তিনি লুকানো আছেন। বাইরে যা-কিছু প্রকাশিত, তাকে জানবার জন্তে আমাদের ইন্দ্রিয় আছে– তেমনি যা গৃঢ়, যা গভীর, তাকে উপলব্ধি করবার জন্যেই আমাদের গভীরতর অন্তরিক্রিয় আছে। তা যদি না থাকত তা হলে সেদিকে আমরা ভুলেও মুখ ফিরাতুম না ; গহনকে পাবার জন্যে আমাদের তৃষ্ণার লেশও থাকত না । এই অগোচরের সঙ্গে যোগের জন্যে আমাদের বিশেষ অস্তরিন্দ্রিয় আছে ব’লেই মানুষ এই জগতে জন্মলাভ ক’রে কেবল বাইরের জিনিসে সস্তুষ্ট থাকে নি। তাই সে চারিদিকে খুজে খুজে মরছে, দেশবিদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাকে কিছুতে থামতে দিচ্ছে না। কোথা থেকে সে এই খুজে-বের-করবার পরোয়ানা নিয়ে সংসারে এসে উপস্থিত হল? যা-কিছু পাচ্ছি, তার মধ্যে আমরা সম্পূর্ণকে পাচ্ছি নে— যা পাচ্ছি নে, তার মধ্যেই আমাদের আসল পাবার সামগ্ৰীটি আছে, এই একটি স্বষ্টিছাড়া প্রত্যয় মামুষের মনে কেমন করে জন্মাল ? পশুদের মনে তো এই তাড়নাটি নেই। উপরে যা আছে তারি মধ্যে তাদের চেষ্টা ঘুরে বেড়াচ্ছে— মুহূর্তকালের জন্যেও তারা এমন কথা মনে করতে পারে না যে ষাকে দেখা যায় না তাকেও খুজতে হবে, যাকে পাওয়া যায় না তাকেও লাভ করতে হবে । তাদের ইন্দ্রিয় এই বাইরে এসে থেমে গিয়েছে, তাকে অতিক্রম করতে পারছে না বলে তাদের মনে কিছুমাত্র বেদনা নেই। কিন্তু এই একটি অত্যন্ত আশ্চর্য ব্যাপার, মানুষ প্রকাশ্বের চেয়ে গোপনকে কিছুমাত্র কম করে চায় না— এমন কি, বেশি করেই চায়। তার সমস্ত ইন্দ্রিয়ের বিরুদ্ধ সাক্ষ্য সত্ত্বেও মানুষ বলেছে, ‘দেখতে পাচ্ছি নে কিন্তু আরো আছে, শোনা যাচ্ছে না কিন্তু আরো আছে।’ জগতে অনেক গুপ্ত সামগ্ৰী আছে যার আচ্ছাদন তুলে ফেললেই তা প্রত্যক্ষগম্য হয়ে ওঠে, এ কিন্তু সে-রকম নয়— এ আচ্ছন্ন বলে গুপ্ত নয়, এ গভীর ব’লেই গুপ্ত, সুতরাং একে যখন আমরা জানতে পারি তখনো এ গভীর থাকে। গোরু উপরের থেকে ঘাস ছিড়ে খায়, শূকর দাত দিয়ে মাটি চিরে সেই ঘাসের মুখা উপড়ে খেয়ে থাকে, কিন্তু এখানে উপরের ঘাসের সঙ্গে নিচেকার মুথার প্রকৃতিগত