পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

848 ब्रदौडग्न-द्रळनांदजौ বিরহসন্ধ্যার অন্ধকারকে যদি শুধু এই বলে কাদতে হত যে, কেমন করে তোর দিনরাত্রি কাটবে, তা হলে সমস্ত রস শুকিয়ে যেত এবং আশার অঙ্কুর পর্যন্ত বঁাচত না – কিন্তু শুধু কেমন করে কাটবে নয় তো, কেমন করে কাটবে হরি বিনে দিনরাতিয়া— সেইজন্যে ঐ ‘হরি বিনে’ কথাটাকে ঘিরে ঘিরে এত অবিরল অজস্র বর্ষণ। চিরদিনরাত্রি যাকে নিয়ে কেটে যাবে, এমন একটি চিরজীবনের ধন কেউ আছে —তাকে না পেয়েছি নাই পেয়েছি, তবু সে আছে, সে আছে– বিরহের সমস্ত বক্ষ ভরে দিয়ে সে আছে— সেই হরি বিনে কৈসে গোঙায়বি দিনরাতিয়া । এই জীবনব্যাপী বিরহের যেখানে আরম্ভ সেখানে যিনি, যেখানে অবসান সেখানে যিনি, এবং তারি মাঝখানে গভীরভাবে প্রচ্ছন্ন থেকে যিনি করুণ স্বরের বঁাশি বাজাচ্ছেন, সেই হরি বিনে কৈসে গোঙায়বি দিনরাতিয়া । দ্বিধা দুইকে নিয়ে মানুষের কারবার। সে প্রকৃতির, আবার সে প্রকৃতির উপরের। একদিকে সে কায়া দিয়ে বেষ্টিত, আর-একদিকে সে কায়ার চেয়ে অনেক বেশি। মানুষকে একই সঙ্গে দুটি ক্ষেত্রে বিচরণ করতে হয়। সেই দুটির মধ্যে এমন বৈপরীত্য আছে যে, তারি সামঞ্জস্যসংঘটনের দুরূহ সাধনায় মানুষকে চিরজীবন নিযুক্ত থাকতে হয় । সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি, ধর্মনীতির ভিতর দিয়ে মানুষের উন্নতির ইতিহাস হচ্ছে এই সামঞ্জস্যসাধনেরই ইতিহাস । যত-কিছু অনুষ্ঠানপ্রতিষ্ঠান শিক্ষাদীক্ষা সাহিত্যশিল্প সমস্তই হচ্ছে মানুষের দ্বন্দ্বসমন্বয়চেষ্টার বিচিত্র ফল । স্বন্দ্বের মধ্যেই যত দুঃখ, এবং এই দুঃখই হচ্ছে উন্নতির মুলে। জন্তুদের ভাগ্যে পাকস্থলীর সঙ্গে তার খাবার জিনিসের বিচ্ছেদ ঘটে গেছে— এই দুটোকে এক করবার জন্যে বহু দুঃখে তার বুদ্ধিকে শক্তিকে সর্বদাই জাগিয়ে রেখেছে ; গাছ নিজের থাবারের মধ্যেই দাড়িয়ে থাকে— ক্ষুধার সঙ্গে আহারের সামঞ্জস্তসাধনের জন্যে তাকে নিরস্তর দুঃখ পেতে হয় না। জস্তুদের মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষের বিচ্ছেদ ঘটে গেছে— এই বিচ্ছেদের সামঞ্জস্তসাধনের দুঃখ থেকে কত বীরত্ব ও কত সৌন্দর্যের স্থষ্টি হচ্ছে তার আর সীমা নেই ; উদ্ভিদরাজ্যে যেখানে স্ত্রীপুরুষের ভেদ নেই অথবা যেখানে তার মিলনসাধনের জন্যে বাইরের উপায় কাজ করে, সেখানে কোনো দুঃখ নেই, সমস্ত সহজ। মনুষ্যত্বের মুলে আর-একটি প্রকাণ্ড দ্বন্দ্ব আছে ; তাকে বলা যেতে পারে প্রকৃতি