পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন 曦 8brసి তার সম্বন্ধ আরম্ভ হল। এই-যে আনন্দ, এ আনন্দ ছিল কোথায়, এ আনন্দ আসে কোথা থেকে যে-পিতামাতার ভিতর দিয়ে শিশু একে পেয়েছে, সেই পিতামাতা একে পাবে কোথায়। এ কি তাদের নিজের সম্পত্তি। এই আনন্দ জীবনের প্রথম মুহূর্তেই যেখান থেকে এসে পৌছল, সেইখানে মানুষের চিত্ত গিয়ে যখন উত্তীর্ণ হয় তখনি এতবড়ো কথা সে অতি সহজেই বলে, “পিতা নোহসি– তুমিই আমার পিতা, আমার মাতা।’ আমাদের এই মন্দিরের একজন উপাসক আমাকে জানিয়েছেন, আজ তার মাতার শ্রাদ্ধদিন। আমি তাকে বলছি, আজ র্তার মাতাকে খুব বড়ো করে দেখবার দিন, বিশ্বমাতার সঙ্গে তাকে মিলিয়ে দেখবার দিন । মা যখন ইন্দ্ৰিয়বোধের কাছে প্রত্যক্ষ ছিলেন, তখন তাকে এতবড়ো করে দেখবার অবকাশ ছিল না। তখন তিনি সংসারে আচ্ছন্ন হয়ে দেখা দিতেন। আজ র্তার সমস্ত আবরণ ঘুচে গিয়েছে— যেখানে তিনি পরিপুর্ণ সত্য, সেইখানেই আজ তাকে দেখে নিতে হবে । যিনি জন্মদান করে নিজের মাতৃত্বের মধ্য দিয়ে বিশ্বমাতার পরিচয়সাধন করিয়েছেন, আজ তিনি মৃত্যুর পর্দা সরিয়ে দিয়ে সংসারের আচ্ছাদন ছিন্ন করে সেই বিশ্বজননীর মধ্যে নিজের মাতৃত্বের চিরন্তন মুর্তিটি সন্তানের চক্ষে প্রকাশ করে দিন । শ্রাদ্ধদিনের ভিতরকার কথাটি— শ্রদ্ধা । শ্রদ্ধা শব্দের অর্থ হচ্ছে বিশ্বাস । আমাদের মধ্যে একটি মুঢ়তা আছে ; আমরা চোখে-দেখা কানে-শোনাকেই সব চেয়ে বেশি বিশ্বাস করি। যা আমাদের ইন্দ্ৰিয়বোধের আড়ালে পড়ে যায়, মনে করি, সে বুঝি একেবারেই গেল। ইন্দ্রিয়ের বাইরে শ্রদ্ধাকে আমরা জাগিয়ে রাখতে পারি নে । আমার চোখে-দেখা কানে-শোনা দিয়েই তো আমি জগৎকে স্বষ্টি করি নি যে, আমার দেখাশোনার বাইরে যা পড়বে তাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। যাকে চোখে দেখছি, যাকে সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে জানছি, সে র্যার মধ্যে আছে, যখন তাকে চোখে দেখি নে, ইন্দ্রিয় দিয়ে জানি নে, তখনো তারি মধ্যে আছে। আমার জানা আর তার জানা তো ঠিক এক সীমায় সীমাবদ্ধ নয়। আমার যেখানে জানার শেষ সেখানে তিনি ফুরিয়ে যান নি। আমি যাকে দেখছি নে, তিনি তাকে দেখছেন– আর র্তার সেই দেখায় নিমেষ পড়ছে না । সেই অনিমেষ জাগ্রত পুরুষের দেখার মধ্যেই আজ মাকে দেখতে হবে। আজ এই শ্রদ্ধাটিকে হৃদয়ে জাগ্রত করে তুলতে হবে যে, মা আছেন, মা সত্যের মধ্যে