পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় & Soa প্রাণের বৃহৎ রঙ্গলীলা শিশুর দুটি চোখের বুদ্ধিবিহীন চঞ্চল ঔৎস্থক্যের মধ্যে দেখতে পেতুম। শিশুর মধ্যে সেই বিশ্বশিশুকে দেখার আনন্দেই এই কবিতাটি লিখেছি। — বিচিত্রা, ১৩৩৪ অগ্রহায়ণ আরেক দিন যখন বছর দুয়েক হল দক্ষিণ আমেরিকায় যাত্রা করেছিলুম তখন মনের মধ্যে কোনো ভার ছিল না। ধারা আমাকে নিমন্ত্রণ করেছিলেন র্তারা আমাকে ভরসা দিয়েছিলেন যে, তারা আমার কাছ থেকে বক্তৃত চান না, আমাকেই চান। দেশের দিক থেকেও কোনো অনুরোধ নিয়ে আসি নি, কেবল জাহাজে ওঠবার আগে একটি বাঙালী মেয়ের চিঠি পেয়েছিলুম, সে ইচ্ছে জানিয়েছিল আমি যেন ডায়ারি লিখি। তার পরে ভেসে পড়লুম সমুদ্রে । মন অনেকদিন এমন মুক্তি পায় নি। সামনে পিছনে কর্তব্যের তাগিদ নেই, আশেপাশেও তথৈবচ। বহুকাল পুর্বে, তখন বয়স অল্প, ঘরে কিম্বা বাইরে খাতির করবার লোক নেই,— লেখা আরম্ভ করেছি কিন্তু সে লেখা দূরে পৌছয় নি। আমার কাছে দেশের লোকের বা বিদেশের লোকের কোনো প্রত্যাশা ছিল না। পাঠক জমতে আরম্ভ করে নি তা বলা যায় না, কিন্তু পাঠকমণ্ডলী-নামক প্রকাগু একটি শনিগ্রহ আমার জীবনকে তার উপগ্রহদলে ভরতি করবার জন্যে টান মারে নি। তখন মাসিকপত্র দুটি-চারটি, তার মধ্যে যারা প্রবলকণ্ঠশালী তারা ছিল আমার নিয়ত প্রতিকুল। সাপ্তাহিক যে-কয়টি ছিল তারা কেউ আমার প্রতি প্রসন্ন ছিল না। তাই আমার দায়িত্ব ছিল প্রধানত আমার নিজের কাছেই । তখন না ছিলেম আখ্যাত, না ছিলেম বিখ্যাত, ছিলেম প্রত্যাখ্যাত। তখন বাংলাদেশের নির্জন নদীর চরে ছিল আমার যাওয়া-আসা। সম্পূর্ণ নিজের মনেই লিখে যেতম, শোনবার লোক কেউ ছিল না তা নয়, ছিল দুটি-চারিটি। আমার মন ছিল পাখি ; তার না ছিল খাচী, না ছিল পায়ে শিকল,— না ছিল তার পরে শৌখিনের দাবি, না ছিল তার জন্যে প্রশংসার বাধা খোরাক। তার পর চল্লিশ বছর হয়ে গেল। এবার চলল সমুদ্রযাত্রা সুদীর্ঘ ; পরিচিত সঙ্গী কেবলমাত্র একজন, এলমহর্স্ট, বাংলাভাষায় তার কান ছিল না। ডাঙার কোলাহল বহুদূরে । তার উপর শরীর হল অসুস্থ, তাতে করেও সংসারের দায়িত্ব আরো অনেক দূরে দিলে সরিয়ে। বহুবৎসর পরে তাই ছুটি পাওয়া গেল, অল্পবয়সের হালকা জীবনের ছুটি। অমনি কলম আপনি ছুটল কবিতার চেনা রাস্তায় । ক্যাবিনে বসেও কবিতা লেখা চলে, এইবারে তার প্রথম আবিষ্কার। ক্যাবিনের খাচা বাইরের খাচী, সেটা ভুলতে বেশিক্ষণ লাগে না যদি