পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চণ্ডিদাস শতবার করিয়া বলিয়াছেন যার যত জ্বালা তার ততই পিরীতি“সদা জ্বালা যার, তবে সে তাহার মিলয়ে পিরীতিধন।” “অধিক জ্বালা যার তার অধিক পিরীতি।” ইত্যাদি। কিন্তু সেই চণ্ডিদাস আবার কহিয়াছেন সই, পিরীতি না জানে যারা, এ তিন ভুবনে জনমে জনমে কি সুখ জানিয়ে তারা ? পিরীতি-নামক যে জ্বালা, পিরীতি-নামক যে দুঃখ, এ দুঃখ যাহারা না জানিয়াছে, তাহারা পৃথিবীতে কী সুখ পাইয়াছে ? যখন রাধা কহিলেন বিধি যদি শুনিত, মরণ হইত, ঘুচিত সকল দুখ। চণ্ডিদাস কয়, এমতি হইলে পিরীতির কিবা সুখ! দুখই যদি ঘুচিল তবে আর সুখ কিসের? এত গভীর কথা বিদ্যাপতি কোথাও প্রকাশ করেন নাই। যখন মিলন হইল। তখন বিদ্যাপতির রাধা কহিলেন দারুণ ঋতুপতি যত দুখ দেল, হরিমুখ হেরাইতে সব দূর গেল। যতই আছিল মকু হৃদয়ক সাধ সে সব পূরল পিয়া-পরসাদ। অধরহি পান বিরহ দূর গেল। চিরদিনে বিহি আজু পারল আশ, হেরাইতে নয়নে নাহি অবকাশ। ভনহ বিদ্যাপতি আর নািহ আধি, সমুচিত ঔখদে না বহে বেয়াধি । চিকিৎসক চণ্ডিদাসের মতে বোধ করি ঔষধেও এ ব্যাধির উপশম হয় না, অথবা এ ব্যাধির সমুচিত ঔষধ নাই। কারণ চণ্ডিদাসের রাধা শ্যামে যখন মিলন হয় তখন “দুই কোরে দুই কাদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া”। কিছুতেই তৃপ্তি নাই— নিমিখে মানয়ে যুগ কোরে দূর মানি! যখন কোনো ভাবনা নাই, যখন শ্যামকে পাইয়াছেন, তখনো রাধার ভয় যায় না এই ভয় উঠে। মনে, এই ভয় উঠে, না জানি কানুর প্রেম তিলে জনি ছুটে । গড়ন ভাঙ্গিতে, সই, আছে কত খল ভাঙ্গিয়া গড়িতে পারে সে বড় বিরল। যথা তথা যাই আমি যত দূর পাই, চাদ মুখের মধুর হাসে তিলেকে জুড়াই। সে-হেন বঁধুরে মোর যে জন ভাঙ্গায় হাম নারী অবলার বধ লাগে তাঁয়! চণ্ডিদাস কহে, রাই, ভাবিছ অনেক তোমার পিরীতি বিনে সে জীয়ে তিলেক ।