পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

సా8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বাধা আগেভাগে অভিশাপ দিয়া রাখে, বাধা শানোর সহিত ঝগড়া করিতে থাকে। এমনি তাহার ভয় যে, তাহার মনে হয় যেন সতাই তাহার শ্যামকে কে লইল । একটা অলীক আশঙ্কা মাত্রও প্ৰাণ পাইয়া তাহার সম্মুখে জীবন্ত হইয়া দাড়ায়, কাজেই রাধা তাহার সহিত বিবাদ করে। সে বলে— সে-হেন বঁধুরে মোর যে জন ভাঙ্গায় হাম নারী অবলার বধ লাগে তায় ! যদিও তােহর বধূকে এখনো কেহ ভাঙায় নি, কিন্তু তা বলিয়া সে সুস্থির হইতে পারিতেছে কই ? যখন শ্যাম তাহার সম্মুখে বহিয়াছে, তখনো সে শ্যামকে কহিতেছে— কি মোহিনী জান বধু কি মোহিনী জােন! অবলার প্রাণ নিতে নাহি তোমা হেন ! বুঝিতে নারিনু বধু তোমার পিরাতি! পর কৈানু আপন, আপন কৈানু পর। কোন বিধি সিরাজিল সোতের সেওলি, এমন ব্যথিত নাই ডাকি বন্ধু বলি ! বধু যদি তুমি মোরে নিদারুণ হও মরিব তোমার আগে, দাড়াইয়া রাও } রাধাের আর সোয়স্তি নাই ; শ্যাম সম্মুখে রহিয়াছেন, শাম রাধার প্রতি কোনো উপেক্ষা প্ৰকাশ করেন নাই, তবুও রাধ একটা “যদি"কে গডিয়া তুলিয়া, একটা ‘‘যদি’কে জীবন দিয়া কাদিয়া সারা হইল। কহিল বধু যদি তুমি মোরে নিদারুণ হও মরিব তোমার আগে, দাড়াইয়া র ও । বঁধু নিদারুণ না হইতে হইতেই সে ভয়ে সশঙ্কিত। রাধার কি আর সুখ আছে ? একদিন রাধা গৃহে গঞ্জনা তোমারে বুঝাই বন্ধু, তোমারে বুঝাই, ডাকিয়া শুধায় মোরে হেন। কেহ নাই । এত করিয়া বুঝাইবার আবশ্যক কী ? শ্যাম কি বুঝেন না ? কিন্তু তবু রাধার সর্বদাই মনে হয়, “কি জানি ?” মনে হয়, শ্যাম ও পাছে আমাকে ডাকিয়া না। শুধায়। যদি ও শ্যামের সেরূপ ভাব দেখে নাই, তবুও ভয় হয়! তাই অত করিয়া আজ বুঝাইতে আসিয়াছে ডাকিয়া শুধায় মোরে হেন কেহ নাই। অনুক্ষণ গহে মোরে গঞ্জয়ে সকলে, নিচয় জানিও মুঞি ভখিমু গরলে। এ ছার পরাণে আর কিবা আছে সুখ ? মোর আগে দাড়াও, তোমার দেখিব চাদ মুখ। খাইতে সোয়াস্তি নাই, নাহি টুটে ভুককে মোর ব্যথিত আছে, কারে কবি দুখ! রাধার এই উক্তির মধ্যে কত কথাই অব্যক্ত আছে। যেখানে রাধা বলিতেছেন অনুক্ষণ গহে মোরে গঞ্জয়ে সকলে, নিচয় জানিও মুঞি ভখিামু গরলে।