পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> Obr রবীন্দ্র-রচনাবলী গ্রন্থে প্রেমের গান এত আছে, এবং এক-একটি গান শুনিয়া এত কথা মনে পডে. যে-সকল গান তুলিলে, সকল কথা বলিলে পুঁথি বাড়িয়া যায়। প্ৰকাশকের সহিত এক বিষয়ে কেবল আমাদের ঝগড়া আছে। তিনি ব্ৰহ্মসংগীত ও আধুনিক ইংরাজিওয়ালাদিগের রচনাকে ইহার মধ্যে স্থান দিলেন কেন ? আমরা তো ভালো গান শুনিবার জন্য এ বই কিনিতে চাই না। অশিক্ষিত অকৃত্রিম হৃদয়ের সরল গান শুনিতে চাই। প্রকাশক স্থানে স্থানে তাহার বড়োই ব্যাঘাত করিয়াছেন। আমরা কেন যে প্রাচীন ও ইংরাজিতে অশিক্ষিত লোকের রচিত সংগীত বিশেষ করিয়া দেখিতে চাই তাহার কারণ আছে। আধুনিক শিক্ষিত লোকদিগের অবস্থা পরস্পরের সহিত প্ৰায় সমান। আমরা সকলেই একত্রে শিক্ষালাভ করি, আমাদের সকলের হৃদয় প্রায় এক ছাচে ঢালাই করা। এই নিমিত্ত আধুনিক হৃদয়ের নিকট হইতে আমাদের হৃদয়ের প্রতিধ্বনি পাইলে আমরা তেমন চমৎকৃত হই না ; কিন্তু প্ৰাচীন সাহিত্যের মধ্যে যদি আমরা আমাদের প্রাণের একটা মিল খুঁজিয়া পাই, তবে আমাদের কী বিস্ময়, কী আনন্দ! আনন্দ কেন হয়? তৎক্ষণাৎ সহসা মুহুর্তের জন্য বিদ্যুতালোকে আমাদের হৃদয়ের অতি বিপুল স্থায়ী প্রতিষ্ঠাভূমি দেখিতে পাই বলিয়া। আমরা দেখিতে পাই মগ্নতরী হতভাগ্যের ন্যায় আমাদের এই হৃদয় ক্ষণস্থায়ী যুগবিশেষের অভ্যাস ও শিক্ষা --নামক ভাসমান কাষ্ঠখণ্ড আশ্রয় করিয়া ভাসিয়া বেড়াইতেছে না, অসীম মানবহৃদয়ের মধ্যে ইহার নীড় প্রতিষ্ঠিত { ইহা দেখিলে আমাদের হৃদয়ের উপরে আমাদের বিশ্বাস জন্মে। আমরা তখন যুগের সহিত যুগান্তরের গ্রন্থনিসূত্র দেখিতে পাই। আমার এই হৃদয়ের পানীয়- একি আমার নিজেরই হৃদয়স্থিত সংকীর্ণ কৃপের পাঙ্ক হইতে উখিত, না, অভ্ৰভেদী মানবহৃদয়ের গঙ্গোত্রীশিখরনিঃসৃত, সুদীর্ঘ অতীত কালের শ্যামল ক্ষেত্রের মধ্য দিয়া প্রবাহিত, বিশ্বসাধারণের সেবনীয় স্রোতস্বিনীর জল! যদি কোনো সুযোগে জানিতে পারি শেষোক্তটিই সত্য, তবে হৃদয় কি প্ৰসন্ন হয়! প্ৰাচীন কবিতার মধ্যে আমাদিগের হৃদয়ের ঐক্য দেখিতে পাইলে আমাদের হৃদয় সেই প্ৰসন্নতা লাভ করে। অতীতকালের প্রবাহ ধারা যে হৃদয়ে আসিয়া শুকাইয়া যায় 。म इक्षप्रश्च दैी भक्रसृभि ! ঐ বুঝি এসেছি বৃন্দাবন। আমায় বলে দে রে নিতাইধন!! ওরে, বৃন্দাবনে পশুপাখির রব শুনি না কি কারণ! ওরে, বংশীবািট অক্ষয়বট কোথা রে তমালবন! ওরে, বৃন্দাবনের তরুলতা শুকায়েছে কি কারণ ! ওরে, শ্যামকুণ্ড রাধাকুণ্ড কোথা গিরি গোবর্ধন!! কেন এ বিলাপ ! এ বৃন্দাবনের মধ্যে সে বৃন্দাবন নাই বলিয়া। বর্তমানের সহিত অতীতের একেবারে বিচ্ছেদ হইয়াছে বলিয়া! তা যদি না হইত, যদি আজ সেই কুঞ্জের একটি লতাও দৈবাৎ চোখে পড়িত, তবে সেই ক্ষীণ লতাপাশের দ্বারা পুরাতন বৃন্দাবনের কত মাধুরী বাধা দেখিতাম। J আজকাল প্ৰায় এমন দেখা যায় অনেক বিষয়ে অনেক রকম মত উঠিয়াছে, কিন্তু কাজের সঙ্গে তাহার মিল হয় না। এমনও দেখা যায় অল্প বয়সে র্যাহারা পরমোৎসাহে সম্পূর্ণ নূতন করিয়া সমাজের পরিবর্তন-সাধনে উদ্যোগী হইয়াছিলেন কিঞ্চিৎ অধিক বয়সে তাহারাই পুরাতন প্ৰথা অবলম্বন করিয়া শান্তভাবে সংসারযাত্রা নির্বাহ করিতেছেন। অনেকে ইহার কারণ এমন বলেন যে, বাঙালিদের কোনো মতের বা কাজের উপর যথার্থ অকৃত্ৰিম সুগভীর অনুরাগ নাই- মতগুলি কার্যে পরিণত করিবার জন্য