পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

भवि-अख्यिक SOC অতএব কনগ্রেসের দ্বারায় উত্তরোত্তর আমাদের যথার্থ রাজভক্তি বৃদ্ধি হইতেছে এবং মহৎ মনুষ্যত্বের নিকট সংস্পর্শ লাভ করিয়া আমাদের জীবনের মধ্যে অলক্ষিতভাবে মহত্ত্ব সঞ্চারিত হইতেছে। আমরা কথা কহি বলিয়া যে ইংরাজি সম্পাদকেরা আমাদের প্রতি ঘূণা প্ৰকাশ করেন, তাহাদের মনের ভাব যে কী তাহা ঠিক জানি না। বোধ করি তাহারা বলিতে চান “তোমরা কাজ করো”। ঠিক সেই কথাটাই হইতেছে! কাজ করিতেই চাই। সেইজন্যই আগমন । যখন আমরা কাজ চাহিতেছি তখন তোমরা বলিতেছ, “কথা কহিতেছ। কেন!” আচ্ছা, দাও কাজ। অমনি তোমরা তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিবে, “না না, সে কাজের কথা হইতেছে না- তোমরা আপন সমাজের কাজ করে !" আমরা সমাজের কাজ করি কি না করি সে খবর তোমরা রাখা কি ? যখনই কাজ চাহিলাম অমনি আমাদের সমাজের প্রতি তোমাদের সহসা একান্ত অনুরাগ জন্মিল। আমাদের সমাজের কাজে যদি আমরা কোনো শৈথিলা করি আমাদের চৈতন্য করাইবার লোক আছে; জােনই তো বাকশক্তিতে আমরা দুর্বল নাহি। অতএব পরামর্শ বিলাত হইতে আমদানি করা নিতান্ত বাহুল্য। র্যাহারা রাজনীতিকে সমাজনীতির অপেক্ষা প্রাধান্য দিয়া থাকেন, যাহারা রাজ-পুরুষদের কর্তব্য বুদ্ধি উদ্রেক করাইতে নিরতিশয় ব্যাপৃত থাকিয়া নিজের কর্তব্যকার্যে অবহেলা করেন, তাহারা অন্যায় করেন " এবং সে সম্বন্ধে আমাদের স্বজাতীয়দিগকে সতর্ক করিয়া দিবার জন্য আমরা মাঝে মাঝে চেষ্টার ক্রটি কবি না। শ্রোতৃবর্গ বোধ করি বিস্মত হইবেন না, বর্তমান বক্তাও ক্ষুদ্রবুদ্ধি ও ক্ষুদ্ৰশক্তি অনুসারে মধ্যে মধ্যে অগত্যা এইরূপ অপ্রীতিকর চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইয়াছেন। কর্তব্যের আপেক্ষিক গুরুলঘুতা সকল সময়ে সূক্ষ্মভাবে বিচার করিয়া চলা কোনো জাতির নিকট হইতেই আশা করা যাইতে পারে না ; অন্ধতা, হৃদয়ের সংকীর্ণতা বা কৃত্রিম প্ৰথা -দ্বারা নীত হইয়৷ তোমাদের স্বজাতীয়েরা যখনই যথার্থ পথ পরিত্যাগ করিয়াছে এবং অপ্ৰকৃতকে প্রকৃতের অপেক্ষা অধিকতর সম্মান দিয়াছে, তখনই তোমাদের চিন্তাশীল পণ্ডিতগণ, তোমাদের কার্লাইল, ম্যাথ্য আর্নল্ড, তাহাদেৱ সে চেষ্টা সফল হইতেছে কি না বলা কঠিন। কারণ, সামাজিক সংস্কারকার্য অপেক্ষাকৃত নিঃশব্দে নিগঢ়ি অলক্ষিতভাবে সাধিত হইয়া থাকে। নৈসৰ্গিক জীবন্তশক্তির ন্যায় সে আপনাকে গোপন করিয়া রাখে। তাহার প্রতিদিনের প্রত্যক্ষ হিসাব পাওয়া দুঃসাধ্য। আমাদের সমাজেও সেইরূপ জীবনের কার্য চলিতেছে, তাহা বিদেশীয় দৃষ্টিগোচর নহে। এমন-কি স্বদেশীয়ের পক্ষেও সমাজের পরিবর্তন প্রতি মুহুর্তে অনুভবযোগ্য হইতে পারে না। অতএব আমাদের সমাজের ভার আমাদের দেশের চিন্তাশীল লোকদের প্রতি আপণ করিয়া যে কথাটা তোমাদের কাছে উঠিয়াছে আপাতত তাহারই উপযুক্ত যুক্তিদ্বারা তাহার বিচারকরো। বলে যে “ তোমরা অযোগা” অথবা বলে যে “আমাদের ইচ্ছা নাই”- কিন্তু “তোমাদের বাল্যবিবাহ আছে” বা “বিধবাবিবাহ নাই” এ কথাটা নিতান্তই অসংলগ্ন হইয়া পড়ে। সামাজিক অসম্পূর্ণতা তোমাদের দেশেও আছে এবং পূর্বে হয়তো আরো অনেক ছিল, কিন্তু সে কথা বলিয়া তোমাদের বক্ততা কেহ বন্ধ করে নাই, তোমাদের রাজনৈতিক প্রার্থনা কেহ নিরাশ করে নাই। তোমরা এমন কথাও বলিতে পারিতে যে “তোমাদের দেশে আমাদের মতো এমন সংগীতচর্চা ও চিত্রশিল্পের আদর এখনো হয় নাই। অতএব তোমাদের কোনো কথাই শুনিতে চাহি না”। ইহা অপেক্ষা বলা ভালো “আমার ইচ্ছা আমি শুনিব না”, তাহাতে তোমাদেরও কথা অনেকটা সংক্ষেপ হইয়া আসে। কিন্তু তোমাদের জাতির মধ্যেই তোমাদের অপেক্ষা আরো উচ্চ বিচারশালা আছে, সেইজন্যই আমরা আশা ত্যাগ করি নাই এবং সেইজনাই আমাদের কনগ্রেস। যদিও আমার এ-সকল কথা তোমাদের কর্ণগোচর হইবার কোনো সম্ভাবনা নাই- কারণ, আমাদের সমাজের মঙ্গলের প্রতি তোমাদের অত্যন্ত প্রচুর অনুরাগ সত্ত্বেও আমাদের ভাষা তোমরা