পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NSV90 Ve রবীন্দ্র-রচনাবলী যদি বলে “উদ্দেশ্য বিশেষ কিছুই নাই, আমরা দেশীয় মন্ত্রীর কোনো আবশ্যক বোধ করিতেছি না, কেবল, তোমরা কিছুদিন হইতে বড়ো বিরক্ত করিতেছ, তাই অল্পস্বল্প খোরাক দিয়া তোমাদের মুখ বন্ধ করাই আমাদের উদ্দেশ্য”, তবে সে উদ্দেশ্য সফল হয় নাই। আজই তাহার প্রমাণ। আজ আমরা এই শহরের যত বক্তা এবং যত শ্রোতা ইনফ্লয়েঞ্জাশয্যা হইতে কায়ক্লেশে গাত্ৰোখান করিয়া ভগ্নক্ষীণকণ্ঠে আপত্তি উত্থাপন করিতে আসিয়াছি, শরীর যতই সুস্থ ও কণ্ঠস্বর যতই সবল হইতে থাকিবে আমাদের আপত্তি ততই অধিকতর তেজ ও বায়ুবল লাভ করিতে থাকিবে সন্দেহ নাই। আমাদের ভূতপূর্ব রাজপ্রতিনিধিগণের মধ্যে অনেকেই একবাক্যে স্বীকার করিয়াছেন যে, ভারতরাজতন্ত্ৰে প্ৰজসাধারণের দ্বারা মন্ত্রীনির্বাচন কোনো-না-কোনো উপায়ে প্রবর্তিত করা যুক্তিসংগত। এ সম্বন্ধে লর্ড নৰ্থব্ৰুক, লর্ড রিপন, লর্ড ডাফরিন, সার রিচার্ড টেম্পল প্রভৃতির কথা কতদূর শ্রদ্ধার যোগ্য তাহা বলা বাহুল্য। তাহদের উপরে আমাদের আর নূতন যুক্তি দেখাইবার আবশ্যক করে না। আমরা কেবল এই বলিয়া আক্ষেপ করিব যে, যুক্তি আমাদের পক্ষে, অভিজ্ঞতা আমাদের পক্ষে, সহৃদয়তা আমাদের পক্ষে, বড়ো বড়ো সুযোগ লোকের মতো আমাদের পক্ষে, তথাপি কেন আমাদের ইচ্ছা পূৰ্ণ হয় না? আমাদের এই দুৰ্দশা দেখিয়াই আমরা আরো অধিকতর আগ্রহের সহিত প্রার্থনা করিব যে, যে রাজকীয় রহসাধামে আমাদের ভাগা স্থির হয় সেখানে আমাদের আপনার লোক যেন পাঠাইতে পারি- তাহা হইলে যদি কোনো প্রার্থনায় নিৰ্ম্মফলকাম হই, তবে আর কিছু না হীেক তাহার একটা যুক্তিসংগত উত্তর শুনিবার স্বল্প সুখ হইতে বঞ্চিত হইব না। এইখানেই আমি ক্ষান্ত হইতে চাহি৷ আলোচ্য প্ৰস্তাব সম্বন্ধে অনেক প্ৰমাণ, অনেক তর্ক এবং অনেক ইতিহাস আছে! আমি একান্ত সীসংকোচে তাহার প্রতি হস্তক্ষেপ করি নাই। অভ্যাস অনুরাগ ও চর্চা অনুসারে রাজনীতি আমার অধিকারবহির্ভূত। কেবল মনে মনে ঈষৎ ভরসা আছে যে, রাজনৈতিক প্রসঙ্গও সম্ভবত যুক্তিশাস্ত্রের বিধানের মধ্যে ধরা দেয়, অর্থাৎ সত্যের নিয়ম হয়তো এখানেও খাটে, এই জন্য সহজ বুদ্ধির উপর নির্ভর করিয়া লর্ড ক্রসের রচিত বিধির বিরুদ্ধে আমার আপত্তি ব্যক্তি করিয়াছি। অনভিজ্ঞতাবশত যদি কোনো ক্রটি বা অসম্পূর্ণতা প্ৰকাশ পায়, তবে আমার পরবতী যোগ্যতার বক্তা মহাশয়েরা অনুগ্রহপূর্বক তাহা সংশোধন ও সম্পূরণ করিয়া লইবেন। যদি কোনো অন্যায় অবিবেচনার কথা বলিয়া থাকি, তবে তাহার পাপের ভার শ্রোতৃবর্গ অনুগ্রহপূর্বক বক্তার নিজের শিরে চাপাইবেন, কোনো সম্প্রদায় বা সভার স্কন্ধে আরোপ করিবেন না।