পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঔপনিষদ ব্ৰহ্ম ওঁ নমঃ পরমাঝষিভো নমঃ পরমঝষিভিঃ, পরম ঋষিগণকে নমস্কার করি, পরম ঋষিগণকে নমস্কার করি, এবং অদ্যকার সভায় সমাগত আৰ্য্যমণ্ডলীকে জিজ্ঞাসা করি।-- ব্ৰহ্মবাদী ঋষিরা যে ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন সে কি একেবারেই ব্যর্থ হইয়াছে ? অদ্য আমরা কি তাহদের সহিত সমস্ত যোগ বিচ্ছিন্ন করিয়াছি ? বৃক্ষ হইতে যে জীৰ্ণ পল্লবটি ঝরিয়া পড়ে সেও বৃক্ষের মজার মধ্যে কিঞ্চিৎ প্রাণশক্তির সঞ্চার করিয়া যায়- সূর্যকিরণ হইতে যে তেজটুকু সে সংগ্রহ করে তাহা বৃক্ষের মধ্যে এমন করিয়া নিহিত করিয়া যায় যে মৃত কাষ্ঠও তাঁহা ধারণ করিয়া রাখে, আর আমাদের ব্রহ্মবিদ ঋষিগণ ব্ৰহ্ম-সূৰ্যলোক হইতে যে পরম তেজ, যে মহান সত্য আহরণ করিয়া उाश कि 62 নানা শাখাপ্রশাখাসম্পন্ন বনস্পতির, এই ভারতব্যাপী পুরাতন আর্যজাতির, মজার মধ্যে সঞ্চিত করিয়া যান নাই ? তবে কেন আমরা গৃহে গৃহে আচারে অনুষ্ঠানে কায়মনে বাক্যে র্তাহাদের মহাবাক্যকে প্রতি মুহুর্তে পরিহাস করিতেছি? তবে কেন আমরা বলিতেছি, নিরাকার ব্ৰহ্ম আমাদের জ্ঞানের গম্য নহেন, আমাদের ভক্তির আয়ত্ত নহেন, আমাদের কর্মানুষ্ঠানের লক্ষ্য নহেন ? ঋষিরা কি এ সম্বন্ধে লেশমাত্র সংশয় রাখিয়া গিয়াছিলেন, তাহাদের অভিজ্ঞতা কি প্রত্যক্ষ এবং তঁহাদের উপদেশ কি সুস্পষ্ট নহে? তাহারা বলিতেছেন ইহ চেৎ আবেদীদথ সত্যমস্তি ন চেৎ ইহাবেদীর্মহতী বিনষ্টিঃ। এখানে যদি তাহাকে জানা যায়। তবেই জন্ম সত্য হয়, যদি না জানা যায়। তবে “মহতী বিনষ্টিঃ', মহা বিনাশ। অতএব ব্ৰহ্মকে না জানিলেই নয়। কিন্তু কে জানিয়াছে ? কাহার কথায় আমরা আশ্বাস পাইব ? ঋষি বলিতেছেন ইহৈব সন্তোহ থ বিদ্যুস্তাৎ বিয়ং ন চেৎ আবেদীমহতী বিনষ্টিঃ। এখানে থাকিয়াই তাহাকে আমরা জানিয়াছি, যদি না জানিতাম তবে আমাদের মহতী বিনষ্টি হইত। আমরা কি সেই তত্ত্বদশী ঋষিদের সাক্ষা অবিশ্বাস করিব ? ইহার উত্তরে কেহ কেহ সবিনয়ে বলেন- আমরা অবিশ্বাস করি না, কিন্তু ঋষিদের সহিত আমাদের অনেক প্ৰভেদ ; তাহারা যেখানে আনন্দে বিচরণ করিতেন। আমরা সেখানে নিশ্বাস গ্রহণ করিতে পারি না। সেই প্রাচীন মহারণাবাসী বৃদ্ধ পিপ্পলাদ ঋষি এবং সুকেশা চ ভারদ্বাজঃ শৈবশচ সত্যুকামঃ সৌৰ্যায়ণী চ গাগ্যঃ, কৌশল্যাশ্চাষ্মলায়নো ভাগবো বৈদভিঃ কবন্ধী কাতায়নস্তে হৈতে ব্ৰহ্মপরা ব্ৰহ্মনিষ্ঠাঃ পরং ব্ৰহ্মান্বেষমাণাঃ- সেই ভরদ্বাজপুত্র সুকেশা, শিবিপুত্ৰ সন্তাকাম, সীের্যপুত্ৰ গাৰ্গ, অশ্বলপুত্র কৌশল্য, ভূগুপুত্র বৈদাৰ্ভি, কাতায়নপুত্র কবন্ধী, সেই ব্ৰহ্মপর ব্রহ্মনিষ্ঠ পরংব্ৰহ্মান্বেষমাণ ঋষিপুত্ৰগণ, যাহারা সমিৎ হন্তে বনস্পতিচ্ছায়াতলে গুরুসম্মুখে সমাসীন হইয়া ব্ৰহ্মীজিজ্ঞাসা করিতেন তাহদের সহিত আমাদের তুলনা হয় না। না হইতে পারে, ঋষিদের সহিত আমাদের প্রভেদ থাকিতে পারে, কিন্তু সত্য এক, ধর্ম এক, ব্ৰহ্ম এক; যাহাতে ঋষিজীবনের সার্থকতা, আমাদের জীবনের সার্থকতাও তাহাতেই; যাহাতে তাহাদের