পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঔপনিষদ ব্ৰহ্ম » (፩ “እ কুর্কবস্নেবেহ কৰ্ম্মাণি জিজীবিষেচ্ছতং সমাঃ এবং তুয়ি নান্যথেতোহস্তি ন কৰ্ম্ম লিপ্যতে নরেকর্ম করিয়া শত বৎসর ইহলোকে জীবিত থাকিতে ইচ্ছা করিবে, হে নর, তোমার পক্ষে ইহার আর অন্যথা নাই, কমে লিপ্ত হইবে না। এমন পথ নাই। কর্ম করিতেই হইবে এবং জীবনের প্রতি উদাসীন হইবে না; কিন্তু ঈশ্বর সর্বত্র আচ্ছন্ন করিয়া আছেন ইহাই স্মরণ করিয়া কর্মের দ্বারা জীবনের শতবর্ষ যাপন করিবে। ঈশ্বর সর্বত্র আছেন অনুভব করিয়া ভোগ করিতে হইবে এবং ঈশ্বর সর্বত্র আছেন অনুভব করিয়া কর্ম করিতে হইবে। সংসারের সমস্ত কর্তব্য পরিত্যাগ করিয়া কেবল ব্ৰহ্মে নিরত থাকা তাহাও ঈশোপনিষদের উপদেশ سس 2)} অন্ধং তমঃ প্রবিশন্তি যে অবিদ্যামুপাসতে। ততো ভুয় ইব তে তমো যা উ বিদ্যায়াং রতাঃ। যাহারা কেবলমাত্র অবিদ্যা অর্থাৎ সংসারকর্মেরই উপাসনা করে তাহারা অন্ধতমাসের মধ্যে প্রবেশ করে, তদপেক্ষা ভূয় অন্ধকারের মধ্যে প্রবেশ করে যাহারা কেবলমাত্র ব্ৰহ্মবিদ্যায় নিরত। ঈশ্বর আমাদিগকে সংসারের কর্তব্যকর্মে স্থাপিত করিয়াছেন। সেই কম। যদি আমরা ঈশ্বরের কর্ম বলিয়া না জানি, তবে পরমার্থের উপরে স্বাৰ্থ বলবান হইয়া উঠে এবং আমরা অন্ধকারে পতিত হই। অতএব কর্মকেই চরম লক্ষ্য করিয়া কর্মের উপাসনা করিবে না, তাহাকে ঈশ্বরের আদেশ বলিয়া পালন করিবে। কিন্তু বরঞ্চ মুগ্ধভাবে সংসারের কর্ম-নির্বাহও ভালো, তথাপি সংসারকে উপেক্ষা করিয়া সমস্ত কর্ম পরিহারপর্বক কেবলমাত্র আত্মার আনন্দ-সাধনের জন্য ব্ৰহ্মসম্ভোগের চেষ্টা শ্রেয়স্কর নহে। তাহা আধ্যাত্মিক বিলাসিত, তাহা ঈশ্বরের সেবা নহে। কর্মসাধনাই একমাত্ৰ সাধনা। সংসারের উপযোগিতা, সংসারের তাৎপৰ্যই তাই। মঙ্গলকর্মসাধনেই আমাদের স্বাৰ্থ প্রবৃত্তি সকল ক্ষয় হইয়া আমাদের লোভ মোহ আমাদের হৃদগত বন্ধন-সকলের মোচন হইয়া থাকে- আমাদের যে রিপু সকল মৃত্যুর মধ্যে আমাদিগকে জড়িত করিয়া রাখে সেই মৃত্যুপােশ অবিশ্রাম মঙ্গলকমের সংঘর্ষেই ছিন্ন হইয়া যায়। কর্তব্যকর্মের সাধনাই স্বাৰ্থপাশ হইতে মুক্তির সাধনাএবং তুয়ি নান্যথেতোহস্তি ন কর্ম লিপ্যতে নরে- ইহার আর অন্যথা নাই, কমে লিপ্ত হইবে না। এমন 어 Fr বিদ্যাঞ্চাবিদ্যাঞ্চ ন্যস্তদবেদোভয়ং সহ অবিদ্যয়া মৃত্যুং তীরবর্তী বিদ্যয়ামৃতমশ্বতে। বিদ্যা এবং অবিদ্যা উভয়কে যিনি একত্র করিয়া জানেন তিনি অবিদ্যা অর্থাৎ কর্মদ্বারা মৃত্যু হইতে উত্তীর্ণ হইয়া ব্ৰহ্মলাভের দ্বারা অমৃত প্ৰাপ্ত হন। ইহাই সংসারধর্মের মূলমন্ত্ৰ- কর্ম এবং ব্ৰহ্ম, জীবনে উভয়ের সামঞ্জস্য-সাধন। কর্মের দ্বারা আমরা ব্ৰহ্মের অভ্ৰভেদী মন্দির নির্মাণ করিতে থাকিব, ব্ৰহ্ম সেই মন্দির পরিপূর্ণ করিয়া বিরাজ করিতে থাকিবেন। নহিলে কিসের জন্য আমরা ইন্দ্ৰিয়গ্রাম পাইয়াছি ? কেন এই পেশী, এই স্নায়ু, এই বাহুবল, এই বুদ্ধিবৃত্তি, কেন এই মেহপ্রেম দয়া, কেন এই বিচিত্র সংসার ? ইহার কি কোনো অর্থ নাই? ইহা কি সমস্তই অনার্থের হেতু ? ব্ৰহ্ম হইতে সংসারকে বিচ্ছিন্ন করিয়া জানিলেই তাহা অনার্থের নিদান হইয়া উঠে এবং সংসার হইতে ব্ৰহ্মকে দূরে রাখিয়া তাহাকে একাকী সম্ভোগ করিতে চেষ্টা করিলেই আমরা আধ্যাত্মিক স্বার্থপরতায় নিমগ্ন হইয়া জীবনের বিচিত্র সার্থকতা হইতে ভ্ৰষ্ট হই। পিতা আমাদিগকে বিদ্যালয়ে পাঠাইয়াছেন, সেখানকার নিয়ম এবং কর্তব্য সর্বথা সুখজনক নহে। সেই দুঃখের হাত হইতে নিকৃতি পাইবার জন্য বালক পিতৃগৃহে পালাইয়া আনন্দলাভ করিতে চায়। সে বোঝে না বিদ্যালয়ে তাহার কী প্রয়োজন- সেখান হইতে পলায়নকেই সে মুক্তি বলিয়া জ্ঞান করে,