পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SV8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ধবনিরপে ঔ শব্দ ব্ৰহ্মকে নির্দেশ করিতেছে। আবার ওঁ শব্দের একটি অর্থও আছে- সে অর্থ এত উদার যে তাহা মনকে আশ্রয় দান করে, অথচ কোনো সীমায় বদ্ধ করে না। আধুনিক সমস্ত ভারতবষীয় আৰ্য ভাষায় যেখানে আমরা ইহা বলিয়া থাকি প্রাচীন সংস্কৃত ভাষায় সেইখানে ওঁ শব্দের প্রয়োগ। ই শব্দ ও শব্দেরই রূপান্তর বলিয়া সহজেই অনুমিত হয়। উপনিষদও বলিতেছেন ওমিত্যেতদ অনুকৃতিৰ্হ স্ম— ঔ শব্দ অনুকৃতিবাচক, অর্থাৎ ইহা করো বলিলে, ঙ অর্থাৎ হা বলিয়া সেই আদেশের অনুকরণ করা হইয়া থাকে। ওঁ স্বীকারোক্তি। এই স্বীকারোক্তি ওঁ, ব্ৰহ্ম-নির্দেশক শব্দরূপে গণ্য হইয়াছে। ব্ৰহ্মধ্যানের কেবল এইটুকু মাত্র অবলম্বন- ওঁ, তিনি হয়। ইংরাজ মনীষী কার্লাইলও তাঁহাকে Everlasting Yea অর্থাৎ শাশ্বত ওঁ বলিয়াছেন এমন প্রবল পরিপূর্ণ কথা আর কিছুই নাই- তিনি হা, ব্ৰহ্ম ওঁ । আমরা কে কাহাকে স্বীকার করি সেই বুঝিয়া আত্মার মহত্ত্ব। কেহ জগতের মধ্যে একমাত্র ধনকেই স্বীকার করে, কেহ মানকে, কেহ খ্যাতিকে। আদিম আর্যগণ ইন্দ্ৰ চন্দ্র বরুণকে ওঁ বলিয়া স্বীকার করিতেন, সেই দেবতার অস্তিত্বই তাহদের নিকট সর্বশ্রেষ্ঠ বলিয়া প্ৰতিভাত হইত। উপনিষদের ঋষিগণ বলিলেন জগতে ও জগতের বাহিরে ব্ৰহ্মই একমাত্র ওঁ, তিনিই চিরন্তন ই, তিনিই Everlasting Yea। আমাদের আত্মার মধ্যে তিনি ওঁ, তিনিই ইঃ- বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের মধ্যে তিনি ওঁ, তিনিই হঁহা, এবং বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ড দেশ কালকে অতিক্রম করিয়া তিনি ওঁ, তিনিই হা। এই মহৎ নিত্য এবং সর্বব্যাপী যে হা, ও ধ্বনি ইহাকেই নির্দেশ করিতেছে। প্রাচীন ভারতে ব্ৰহ্মের, কোনো প্ৰতিমা ছিল না, কোনো চিহ্ন ছিল না— কেবল এই একটি মাত্র ক্ষুদ্র অথচ সুবৃহৎ ধ্বনি ছিল ঔ। এই ধ্বনির সাহায়ে ঋষিগণ উপাসনানিশিত আত্মাকে একাগ্ৰগামী শরের ন্যায় ব্ৰহ্মের মধ্যে নিমগ্ন করিয়া দিতেন। এই ধ্বনির সাহায়ে ব্ৰহ্মবাদী সংসারীগণ বিশ্বজগতের যাহা-কিছু সমস্তকেই ব্রহ্মের দ্বারা সমাবৃত কবিয়া দেখিতেন। ওমিতি সামানি গায়ন্তি।। ওঁ বলিয়া সাম সকল গীত হইয়া থাকে। ওঁ আনন্দধবনি। ওমিতি ব্ৰহ্মা প্রসীেতি। ‘ওঁ আদেশবাচক। ওঁ বলিয়া ঋত্বিক আজ্ঞা প্ৰদান করেন। সমস্ত সংসারের উপর আমাদের সমস্ত কর্মের উপর মহৎ আদেশরূপে নিত্যকাল ও ধবনিত হইতেছে। জগতের অভ্যন্তরে এবং জগৎকে অতিক্রম করিয়া যিনি সকল সত্যের পরম সত্য- আমাদের হৃদয়ের মধ্যে তিনি সকল আনন্দের পরমানন্দ, এবং আমাদের কর্মসংসারে তিনি সকল আদেশের পরমাদেশ। তিনি ওঁ । ন তত্ৰ সূর্য্যো ভাতি ন চন্দ্ৰতারকং নেমা বিদ্যুতো ভাস্তি কৃতোেহয়মগ্নিঃ। তস্য ভাসা সর্ববমিদং বিভাতি । তিনি যেখানে, সেখানে সূর্যের প্রকাশ নাই, চন্দ্ৰতারকের প্রকাশ নাই। বিদ্যুতের প্রকাশ নাই, এই অগ্নির প্রকাশ কোথায়? সেই জ্যোতির্ময়ের প্রকাশেই সমস্ত প্ৰকাশিত, তাহার দীপ্তিতেই সমস্ত দীপ্যমান। তিনিই ওঁ । তদোতাৎ প্ৰেয়ঃ পুত্রাৎ প্রেয়ো বিত্তাৎ প্রেয়োহন্যস্মাৎ সর্ববস্মাৎ অন্তরতরাং যদায়মাত্মা। এই-যে অন্তরতর পরমাত্মা তিনি পুত্র হইতে প্রিয়, বিত্ত হইতে প্রিয়, সকল হইতেই প্রিয়। তিনিই ওঁ। সত্যান্ন প্ৰমাদিতব্যং।। ধৰ্ম্মান্ন প্ৰমাদিতব্যং।। কুশলান্ন প্রমাদিতব্যং।। ভূত্যৈ ন প্রমাদিতব্যং।।