পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WoS8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী GO জ্বরে শরীর যে পরিমাণ জল চায়, এমন আর কখনো চায় না। ইহার অনেক কারণ আছে। একটা ংশিক কারণ এই যে, ঘামের দ্বারা অনেক বেশি ক্ষয় হইতে থাকে বলিয়া অনেক বেশি জলের দরকার হয়; আর একটি কারণ এই যে, জ্বরে শরীর বিষাক্ত হইতে থাকে এবং জল সেই বিষকে পাতলা করিয়া দেয়। সুরাসার পান করার পরে জল পান করিবার প্রয়োজন ঠিক অনুরূপ কারণেই ঘটিয়া থাকে। জ্বরে জিহবা মুখ এবং কণ্ঠ শুকাইয়া যায়; তাহার কারণ এই যে, বিষ যেখানে মৰ্মস্থানগুলিকে আক্রমণ করে সেখানে তাহাকে গুলিয়া পাতলা করার জন্য প্ৰাপ্তিযোগ্য সমস্ত জলের প্রয়োজন ঘটে। জ্বরের সময়ে রোগী জল চায় তাহার আর একটা কারণ এই যে, তখন সে গরম হইয়া উঠে এবং ঠাণ্ডা জলের সংযোগে তাহার দেহতাপ কমিয়া যায়। ভিতরে যে বিষ আছে জল কেবল যে তাহাকে পাতলা করে তাহা নহে, তাহা দূর করিয়াও দেয়। ( ) এইরূপ কথিত আছে যে, ফ্রান্সে যখন প্রথম পারসাদেশীয় দেীতা প্রেরিত হয়, তখন একদিন বয়সের এবং রূপবত্তার নানা অবস্থায় বিরাজিত ফরাসী মহিলাবৃন্দী-দ্বারা তাহার ঘর পূর্ণ দেখিয়া, রাজদূত আশ্চর্যান্বিত হইয়া যান। ইহার অর্থ জিজ্ঞাসা করিলে তাঁহাকে বলা হইল যে, অজ্ঞাতপ্রায় দেশের প্রতিনিধিকে দেখিবার জন্য কৌতুহলী হইয়া তােহাৱা আসিয়াছেন। আরো এরূপ গল্প শুনা যায়। যে মহামানা মন্ত্রী তাহদের কাহারও সহিত কথা বলিলেন না, তাহদের প্রত্যেককে দেখিয়া দেখিয়া ঘরের চারি দিকে বেড়াইতে লাগিলেন ও তােহর সহচৰ দোভাষীর নিকটে মন্তব্য প্রকাশ কবিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন। একটি বর্ষীয়সী ও অতি ভূষিত মহিলা নিজেকে অতি প্ৰকট করিয়াছিলেন; তিনি দোভাষীকে জিজ্ঞাসা কবিলেন যে, মন্ত্রী কী বলিলেন । তিনি উত্তর দিলেন, “মহামাননীয় কেবল আপনাদের কাহার সৌন্দর্যের কত মূল্য, তাহাই নির্ধারণ করিয়া দিলেন।” সেই মহিলা একজনকে নির্দেশ করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “ভালো, ঐ যুবতীর সম্বন্ধে তিনি কী বলিলেন ?” G. S. মন্ত্রী বলিলেন, “উনি পাচ হাজার ক্রাউনের যোগ্য !" আর একজনকে দেখাইয়া মহিলাটি জিজ্ঞাসা করিলেন, “আর ইনি ?” “দুই হাজার।” “আর ঐ যে উনি ?” “আর আমার সম্বন্ধে তিনি কী বলিলেন ?”- দোভাষী ইতস্তত করিতে লাগিলেন, কিন্তু উত্তর দিবার জন্য পীড়াপীড়ি করাতে বলিলেন যে, তিনি কিছু বলিতে পারেন না। সেই মহিলা জেদ করিয়া বলিতে লাগিলেন, “কিন্তু আমি জানি যে তিনি কিছু বলিয়াছেন।” দোভাষী অবশেষে হয়রান হইয়া হঠাৎ বলিয়া ফেলিলেন, “সত্য কথা বলিতে কী, মহামান্য মন্ত্রী আপনার নিকটে যখন আসিলেন তখন বলিলেন যে, এ দেশের আধপয়সা পাইপয়সা প্ৰভৃতি তাহার জানা নাই।” Q○ উত্তর মেরুপ্রদেশে প্রথম আগমনে যে ছবি মনে মুদ্রিত হয় তাহা স্মৃতিপথে অনেক কাল লাগিয়া থাকে। কয়েক সপ্তাহ ধরিয়া হয়তো তুমি সমুদ্রের মাঝখানে এক দিক হইতে অন্য দিকে ভাসিয়া বেড়াইতেছ; ক্রমশ জাহাজ শান্ততর জলরাশির মধ্যে আসিয়া পৌঁছিল। কিছু দিন ধরিয়া যে কুয়াশা