পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনুবাদ-চর্চা 8SV) SSG সেই প্রথম দিনের সন্ধ্যায় আমার পিসি অজ্ঞান হইয়া পড়িয়া আছেন, দেখিয়া মনে হয় যেন মুমূর্ষ। আমার পিতা তাহার যে কন্যাটিকে অত্যন্ত ভালোবাসিতেন এবং যে তঁহাকে কিছু কম ভালোবাসিত না, তাহার দ্বারা আঘাত-হেতু কপালে-পলেস্তারা দেওয়া; পাশের ঘরে আমার মা একটি শব মাত্র; তবুও আমি আশ্চৰ্যরূপে আশ্রয় পাইয়াছিলাম। সেই রাত্ৰিতে আমি অনিদ্রাবশত চক্ষু বুজি নাই, কিন্তু আতঙ্কশূন্য ও নৈরাশ্যশূন্য হইয়া বিছানায় পড়িয়ছিলাম। তাহার পর হইতে আর একটি দিনও আমার ঘুমের ব্যাঘাত হয় নাই। ইন্দ্ৰিয়গ্রাহ্য পদার্থ সকলের পরে ভর করার অভ্যাস আমার অনেক দিন ছিল না, ইহাই আমাকে খাড়া রাখিয়াছিল। > RV পরিবারের সমস্ত ভার আমার উপরই পড়িয়ছিল, কারণ আমার ভ্রাতা (আমি তাহার প্রতি স্নেহশূন্য হইয়া বলিতেছি না) কোনো কালেই বৃদ্ধ ও দুর্বলের সেবায় উৎসাহী ছিলেন না, বর্তমানে তিনি তাহার পায়ের পীড়া লইয়া এই সকল কর্তব্য হইতে দায়মুক্ত হইয়াছিলেন এবং তখন আমি একই পডিয়ছিলাম। ঠিক ইহার পরদিনে, এরূপ ঘটনায় সচরাচর যেমন হইয়া থাকে সেইমতোই, আমাদের ঘরে অন্তত বিশ জন লোক রাত্রিভোজনে বসিয়া গিয়াছিল, তাহারা আমাকে তাহদের সহিত খাইতে বসিতে রাজি করিয়াছিল। তাহারা সকলেই ঘরের মধ্যে আমোদ করিতেছিল। তাহাদের মধ্যে কেহ-বা বন্ধুতুবশত, কেহ-বা কৌতুহলবশত, কেহ-বা স্বার্থবশত আসিয়াছিল। ܘ ܓ ܠ আমি উহাদের সঙ্গে যোগ দিতে যাইব, এমন সময় আমার স্মরণ হইল যে, আমার মৃত মাতাএমন মা যিনি সারাজীবন সন্তানদের কল্যাণ ব্যতীত আর কিছু কামনা করেন নাই, পাশের ঘরে, একেবারে পাশের ঘরটিতে পড়িয়া রহিয়াছেন। ঘূণা, শোকের উত্তেজনা, অনুতাপের মতো একটা কিছু আমার মনের উপর দুটিয়া আসিল। হৃদয়াবেগের যন্ত্রণায় আমি যন্ত্রচালিতের মতো পাশের ঘরে গিয়া উপস্থিত হইলাম এবং তাহার শবাধারের পার্থে হাটু গাডিয়া পড়িলাম ও তাঁহাকে এত শীঘ ভুলিবার জনা ঈশ্বরের কাছে ও কখনো কখনো তাহার কাছে ক্ষমা চাহিলাম। S SR br অল্প কয়েক বৎসরের পূর্বপর্যন্ত দুয়ার প্রদেশের চা-আবাদী জেলাগুলি ম্যালেরিয়া ও কালাজ্বরের জন্য অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর— এই অখ্যাতি ছিল। শেষে ১৯০৬ সালে যুরোপীয় আবাদকারী যুবকদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা অতিরিক্ত বেশি হওয়ায়, ইহার কারণ-অনুসন্ধান প্রবর্তিত হয়। তাহাতে দেখা যায় যে, এইসকল রোগ প্রতিনিয়ত ঘটিবার মুখ্য কারণ, সাধারণত যথেষ্ট কুইনীন ব্যবহার না করা। দৈনিক অল্পমাত্রায় কুইনীন-ব্যবহার রোগপ্রতিষেধক বলিয়া উপদিষ্ট ও প্রায় সমগ্র যুরোপীয় সমাজ-কর্তৃক গৃহীত হইয়াছে এবং তাহার ফল হইয়াছে যে: তাহাদের মধ্যে কালাজ্বর ঘটা প্রায় থামিয়া গিয়াছে। যথানিয়মে কুইনীন ব্যবহার করায় অনেক যুরোপীয় মহিলা ও শিশু দুয়ার প্রদেশে থাকিয়াই অপেক্ষাকৃত উত্তম স্বাস্থ্য ভোগ করিতে সমর্থ হইয়াছেন। এক্ষণে দুয়ার প্রদেশকে মোটের উপর একটি স্বাস্থ্যকর জেলা বলা হইয়া থাকে, দশ বৎসর পূর্বে ইহা চিন্তা করাই অসম্ভব হইত। SRR সম্প্রতি দুয়ার প্রদেশের সমস্ত যুরোপীয় সরকারি চিকিৎসকদের নিকটে, তথাকার অধিবাসীদের মধ্যে কুইনীন ব্যবহার সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা উপদিষ্ট হইয়াছিল এবং সেই অনুসন্ধানের ফল। ১৯১৭