পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 VV রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী অম্বিকা অক্ষয়; নতুন চীনের জুতা করে মসমস, মেরে কুনুয়ের গুতা ভিড় ঠেলে আগে চলে— হাতে বাধা ঘড়ি, চোখেতে চশমা কারো, সরু এক ছড়ি সবেগে দুলায়। ঘন ঘন ডাক ছাড়ে স্টিমারের বাঁশি ; কে পড়ে কাহার ঘাড়ে, সবাই সবার আগে যেতে চায়। চ’লে- ঠেলা ঠেলি, বকবকি। শিশু মার কোলে চীৎকারস্বরে কাব্দে। গড় গড় করে নোঙর ডুবিল জলে; শিকলের ডোরে জাহাজ পড়িল বাধা; সিডি গেল নেমে, এঞ্জিনের ধকধকি সব গোল থেমে। ’কুলি’, ‘কুলি ডাক পড়ে ডাঙা হতে মুটে দুড়দাড় ক’রে এলো দলে দলে ছুটে । অন্ধ বেণী। যাত্রীদের আত্মীয় স্বজন। অপেক্ষা করিয়া আছে; নাম ধ’রে ডাকে, খুঁজে খুঁজে বের করে যে চায় যাহাকে। শ্যাকরা-গাড়ির ঘোড়া উড়াইল ধূলি। সূর্য গেল অস্তাচলে; আঁধার ঘনালো; হেথা হোথা কেরোসিন লগঠনের আলো দুলিতে দুলিতে যায়, তার পিছে পিছে মাথায় বোঝাই নিয়ে মুটেরা চলিছে। শূন্য হয় গেল তীর ; আকাশের কোণে পঞ্চমীর চাদ ওঠে। দূরে বাশবনে শেয়াল উঠিল ডেকে। মুদার দোকানে টিম টিম ক'রে দীপ জ্বলে একখানে ॥ 837 92 উদ্ধাব মণ্ডল জাতিতে সদেগাপ। তার অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থা। ভূসম্পত্তি যা-কিছু ছিল ঋণের দায়ে বিক্রয় হয়ে গেছে। এখন মজুরি করে কায়ক্লেশে তার দিনপাত হয়। এ দিকে তার কন্যা নিস্তারিণীর বিবাহ। বরের নাম বটকৃষ্ণ । তার অবস্থা মন্দ নয়। ক্ষেতের উৎপন্ন শস্য দিয়ে সহজেই সংসারনির্বাহ হয়। বাড়িতে পূজা-অৰ্চনা ক্রিয়াকর্মও আছে। আগামী কাল উনিশে জ্যৈষ্ঠ বিবাহের দিন। বরযাত্রীর দল আসবে। তার জন্যে আহারাদির উদ্যোগ করা চাই। পাড়ার লোকে কিছু কিছু সাহায্য করেছে। অভাব তবু যথেষ্ট। পাড়ার প্রান্তে একটি বড়ো পুষ্করিণী। তার নাম পদ্মপুকুর। বর্তমান ভূস্বামী দুর্লভবাবুর পূর্বপুরুষদের আমলে এই পুষ্করিণী সর্বসাধারণ ব্যবহার করতে পেতো। এমন কি গ্রামের গৃহস্থবাড়ির কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রয়োজন উপস্থিত হ’লে মাছ ধরে নেবার বাধা ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি দুর্লভবাবু সেই