পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8心 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী করিতে পারি যে, নিজের-ক্ষুধায়-কাতর সংগ্রামপরায়ণ এই জগৎ অতিক্ৰম করিয়া আর এক জগৎ আছে, ইহা সেইখানকার নিয়ম। সুতরাং এইখানেই পরিণাম দেখিতেছি না। চারি দিকে এই-যে বস্তুজগতের ঘোর কারাগারভিত্তি উঠিয়াছে, ইহাই আমাদের অনন্ত কবর-ভূমি নহে। অতএব যখনি আমরা আত্মবিসর্জন করিতে শিখিলাম তখনি আমাদের গুরুভার ঐহিক দেহের উপরে দুটি পাখা উঠিল! পৃথিবীর মাটিতে চলিবার সময় সে পাখা দুটির কোনো অর্থ বুঝা গেল না। কিন্তু ইহা বুঝা গেল যে ঐ পাখা দুটি কেবলমাত্র তাহার শোভা নহে, উহার কার্য আছে। তবে যাহাদের এই পাখা জন্মায় নাই তাহদেরও কি আকাশে উঠিবার অধিকার আছে ? স্থায়িত্ব আমাদের মধ্যে যে-সকল উচ্চ আশা যে-সকল মহত্ত্ব বিরাজ করিতেছে তাহারাই স্থায়ী; আর যাহারা তাহাদিগকে বাধা দিয়াছে, তাহাদিগকে কার্যে পরিণত হইতে দেয় নাই, তাহারা নশ্বর। তাহারা এইখানকারই জিনিস তাহারা কিছু সঙ্গে সঙ্গে যাইবে না। আমার মধ্যে যে-সকল নিত্য পদার্থ বিরাজ করিতেছে তাহা তোমরা দেখিতে পাইতেছ না; তাহদের চারি দিকে যে জড়স্তপ উত্থিত হইয়া কিছু দিনের মতো তাহাদিগকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছে, তাহাই তোমরা দেখিতেছি। আমার মনের মধ্যে যে ধর্মের আদর্শ বর্তমান রহিয়াছে তাহারই উপর আমার স্থায়িত্ব নির্ভর করিতেছে। যখন কাষ্ঠলোষ্ট্রের মতো সমস্ত পডিয়া থাকে তখন ধর্মই আমাদের অনুগমন করে। যাহার আত্মায় এ আদর্শ নাই, দেহের সহিত তাহার সম্পৰ্ণ মৃত্যু হয়। জড়ত্বই তাহার পরিণাম। যে গেছে, সে তাহার জীবনের সার পদার্থ লইয়া গেছে, তাহার যা যথার্থ জীবন তাহাই লইযা গেছে, আর তাহার দুদিনের সুখ দুঃখ, দুদিনের কালিকার মতের অনৈক্য দেখিয়াছি; এমন-কি তাহার মত একরূপ শুনা গিয়াছে, তাহার কাজ আরএকরূপ দেখা গিয়াছে- এই-সকল বিরোধ অনৈক্য চঞ্চলতা তাহার আত্মার জড় আবরণের মতো এইখানেই পড়িয়া রহিল, ইহাকে অতিক্রম করিয়া যে ঐক্য যে অমরতা অধিষ্ঠিত ছিল তাহাঁই কেবল চলিয়া গেল। যখন তাহার দেহ দগ্ধ করিয়া ফেলিলাম। তখন এগুলিও দগ্ধ করিয়া শ্মশানে ফেলিয়া আসা যাক। তাহার সেই মৃত অনিত্যগুলিকে লইয়া অনর্থক সমালোচনা করিয়া কেন তাহার প্রতি অসম্মান করি ? তাহার মধ্যে যে সত্য, যে দেবতা ছিল, যে থাকিবে, সেই আমাদের হৃদয়ের মধ্যে অধিষ্ঠান করুক ! বৈষ্ণব কবির গান মর্তের সীমানা এক স্থানে মর্তের প্রান্তদেশ আছে, সেখানে দাড়াইলে মর্তের পরপর কিছু কিছু যেন দেখা যায়। সে স্থানটা এমন সংকটস্থানে অবস্থিত যে, উহাকে মর্তের প্রান্ত বলিব কি স্বগের প্রান্ত বলিব ঠিক করিয়া উঠা যায় না- অর্থাৎ উহাকে দুইই বলা যায়। সেই প্ৰান্তভূমি কোথায়! পৃথিবীর আপিসের কাজে শ্ৰান্ত হইলে, আমরা কোথায় সেই স্বর্গের বায়ু সেবন করিতে যাই! স্বর্গের সামগ্ৰী স্বৰ্গ কী, আগে তাহাঁই দেখিতে হয়। যেখানে যে-কেহ স্বৰ্গ কল্পনা করিয়াছে, সকলেই নিজ নিজ ক্ষমতা অনুসারে স্বৰ্গকে সৌন্দর্যের সার বলিয়া কল্পনা করিয়াছে। আমার স্বৰ্গ আমার সৌন্দর্যকল্পনার চরম