পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণগাথা “པ་་་་་་་་་་་ SS S ভরুক গগন, ভরুক কনিন, ভরুক নিখিল ধরা, দেখুক ভুবন মিলনস্বপন মধুর বেদন-ভরা। পরান-ভরানে। ঘনছায়াজাল বাহির আকাশ করুক আড়াল, নয়ন ভুলুক, বিজুলি ঝলুক পরম দর্শনে । নমো নমো নম করুণাঘন নম হে । নয়নস্নিগ্ধ অমৃতাঞ্জনপরশে, জীবন পূর্ণ স্থধারসবরষে, তব দশনধনসার্থক মন হে, অকৃপণবর্ষণ করুণাঘন হে । নম হে নম হে | সভাকবি । নটরাজ, মহারানী-মাতার কল্যাণে সেদিন রাজবাড়ি থেকে কিছু ভোজ্যপানীয় সংগ্রহ করে নিয়ে আসছিলেম গুহিণীর ভাণ্ডার-অভিমুখে । মধ্যপথে বাহনটা পড়ল উচট খেয়ে, ছড়িয়ে পড়ল মোদক মিষ্টান্ন পথের পাকে, গড়িয়ে পড়ল পায়সান্ন ভাঙা হাড়ি থেকে নালার মধ্যে । তখন মুষলধারে বর্ষণ হচ্ছে— নৈবেদ্যট শ্রাবণ স্বয়ং নিয়ে গেলেন ভাসিয়ে । তোমাদের এই প্রণামটাও দেখি সেইরকম । খুবই ছড়িয়েছ বটে, কিন্তু পৌছল কোথায় ভেবে পাচ্ছি নে । নটরাজ। কবিবর, অামাদের প্রণামের রস তোমার হাড়িভাঙা পায়েসের রস নয় – ওকে নষ্ট করতে পারবে না কোনে। পাকের অপদেবতা ; সুরের পাত্রে রইল ও চিরকালের মতে, চিরকালের শু্যামল বঁধুর ভোগে বর্ষে বর্ষে ওর অক্ষয় উৎসর্গ। রাজা । কিছু মনে কোরো ন নটরাজ, আমাদের সভাকবি দুঃসহ আধুনিক । হঁপড়িভাঙা পায়েসের রস পাকে গড়ালে উনি সেটাকে নিয়ে চৌরপঙ্কশতক রচনা করতে পারেন, কিন্তু তৃপ্তি পান না সেই রসে যার সঙ্গে না আছে জঠরের যোগ, না আছে ভাণ্ডারের । তোমার কাজ অসংকোচে করে যাও, এখানে অন্য শ্রোতাও আছে । নটরাজ। বনমালিনী, এবার তবে বর্ষাধারাহ্মানের আমন্ত্রণ ঘোষণা করে দাও নূপুরের ঝংকারে, নৃত্যের হিল্লোলে। চেয়ে দেখো, শ্রাবণঘনশ্যামলার সিক্ত বেণীবন্ধন দিগন্তে স্থলিত, তার ছায়াবসনাঞ্চল প্রসারিত ঐ তমালতালীবনশ্রেণীর শিখরে শিখরে।