পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> २० রবীন্দ্র-রচনাবলী আঁধার ঘনায় শূন্যে ; নাহি জানে নাম কী রুদ্র সন্ধানে সিন্ধু তুলিছে দুর্দাম । অরণ্য হতাশ প্রাণে আকাশে ললাট হানে ; দিকে দিকে কেঁদে ফিরে কী দুঃসহ ব্যথ | নটরাজ। ওহে ওস্তাদ, তোমার গানের পিছনে পিছনে ঐ যে দলে দলে মেঘ এসে জুটল। গরজত বরখত চমকত বিজুরী। দুই পক্ষের পাল্ল চলুক। মুরে তালে কথায়, আর মেঘে বিদ্যুতে ঝড়ে । পথিক মেঘের দল জোটে ঐ শ্রাবণগগন-অঙ্গনে । মন রে আমার, উধাও হয়ে নিরুদ্দেশের সঙ্গ নে । দিক-হারানো দুঃসাহসে সকল বাধন পড়ক খসে ; কিসের বাধা ঘরের কোণে শাসনসীমালঙ্ঘনে । বেদন তোর বিজুলশিখা জলুক অন্তরে, সর্বনাশের করিস সাধন বজমন্তরে । অজানাতে করবি গহন, ঝড় সে হবে পথের বাহন ; শেষ ক’রে দিস আপ নারে তুই প্রলয়রাতের ক্ৰন্দনে । সভাকবি । ঐ রে ঘুরে ফিরে আবার এসে পড়ল—সেই অজানা, সেই নিরুদ্দেশের পিছনে-ছোট পাগলামি । নটরাজ। উজ্জয়িনীর সভাকবিরও ছিল ঐ পাগলামি । মেঘ দেখলেই তাকেও পেয়ে বসত অকারণ উৎকণ্ঠ ; তিনি বলেছেন, মেঘালোকে ভবতি সুখিনোহপ্যন্যথাবৃত্তি চেত:— এখানকার সভাকবি কি তার প্রতিবাদ করবেন। সভাকবি । এত বড়ে সাহস নেই আমার । কালিদাসকে নমস্কার ক’রে যথাসাধ্য চেষ্টা করব মেঘ-দেখা হাছতাশটাকে মনে আনতে । নটরাজ। আচ্ছা, তবে থাক্ কিছুক্ষণ হাহুতাশ, এখন অন্য কথা পাড়া যাক । মহারাজ, সব চেয়ে যারা ছোটো, উৎসবে সব চেয়ে সত্য তাদেরই বাণী । বড়ে বড়ে শাল তাল তমালের কথাই কবির বড়ো করে বলেন— যে কচিপাতাগুলি বন জুড়ে কোলাহল করে তাদের জন্যে স্থান রাখেন অল্পই। রাজ। সত্য বলেছ, নটরাজ। ক্রিয়াকর্মের দিনে পাড়ার বুড়ে বুড়ে কর্তার। ভাঙা গলায় হঁকডাক করে, কিন্তু উৎসব জমে ওঠে শিশুদের কলরবে । নটরাজ। ঐ কথাটাই বলতে যাচ্ছিলুম। কিশলয়িনী, এসে তুমি শ্রাবণের আসরে।