পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী २२४” অতীক জানে বিয়ে না করবার শক্ত কারণটা কোনখানে। কথাটা বিতাকে দিয়ে বলিয়ে নিতে চায়, বিভা চুপ করে থাকে। 雷 জীবনের আরম্ভ থেকেই বিভা তার বাবারই মেয়ে সম্পূর্ণরূপে। এত ভালোবাসা, এত ভক্তি সে আর-কোনো মানুষকে দিতে পারে নি। তার বাপ সতীশও এই মেয়েটির উপরে তার অজস্র স্নেহ ঢেলে দিয়েছেন। তাই নিয়ে ওর মার মনে একটু ঈর্ষ ছিল। বিভা ইসাপুষেছিল, তিনি কেবলই খিটখিটু করে বলেছিলেন, ওগুলো বডড বেশি ক্যাক্ ক্যাক্ করে।’ বিভা আসমানি রঙের শাড়ি জ্যাকেট করিয়েছিল, ম৷ বলেছিলেন, এ কাপড় বিভার রঙে একটুও মানায় না। বিভা তার মামাতে৷ বোনকে খুব ভালোবাসত। তার বিয়েতে যেতে চাইলেই মা বলে বসলেন, সেখানে । ম্যালেরিয়া।’ so মায়ের কাছ থেকে পদে পদে বাধা পেয়ে পেয়ে বাপের উপরে বিভার নির্ভর আরও গভীর এবং মজ্জাগত হয়ে গিয়েছিল। * , so মার মৃত্যু হয় প্রথমেই। তার পরে ওর বাপের সেবা অনেকদিন পর্যন্ত ছিল বিভার জীবনের একমাত্র ব্রত। এই স্নেহশীল বাপের সমস্ত ইচ্ছাকে সে নিজের ইচ্ছা করে নিয়েছে। সতীশ তার বিষয়সম্পত্তি দিয়ে গেছেন মেয়েকে । কিন্তু ট্রাক্টর হাতে । নিয়মিত মাসহরা বরাদ্দ ছিল। মোট টাকাটা ছিল উপযুক্ত পাত্রের উদ্দেশে বিভার বিবাহের অপেক্ষায়। বাপের আদর্শে এই উপযুক্ত পাত্র কে তা বিভ। জানত। অন্তত অনুপযুক্ত যে কে তাতে কোনো সন্দেহ ছিল না। একদিন অভীক এ কথা তুলেছিল, বলেছিল, “যাকে তুমি কষ্ট দিতে চাও না, তিনি তো নেই, আর কষ্ট যাকে নিষ্ঠুর ভাবে বাজে, সেই লোকটাই আছে বেঁচে। হাওয়ায় তুমি ছুরি মারতে ব্যথা পাও, আর দরদ নেই এই রক্তমাংসের বুকের পরে।” শুনে বিভা কাদতে কঁদিতে চলে গেল। অভীক বুঝেছিল, ভগবানকে নিয়ে তর্ক চলতে পারে, কিন্তু বাবাকে নিয়ে নয়। বেল প্রায় দশটা ৷ বিভার ভাইঝি স্বস্মি এসে বললে, “পিসিম বেলা হয়েছে।” বিভ। তার হাতে চাবির গোছা ফেলে দিয়ে বললে, “তুই ভাড়ার বের করে দে। আমি এখনি যাচ্ছি।” বেকারদের কাজের বাধ। সীমা না থাকাতেই কাজ বেড়ে যায়। বিভার সংসারও সেইরকম। সংসারের দায়িত্ব আত্মীয়পক্ষে হালকা ছিল বলেই অনাত্মীয়পক্ষে হয়েছে বহুবিস্তৃত। এই ওর আপনগড় সংসারের কাজ নিজের হাতে করাই ওর অভ্যাস, চাকরবাকর পাছে কাউকে অবজ্ঞা করে। অভীক বললে, “অন্যায় হবে তোমার এখনই