পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন সঙ্গী . ९२8 যাওয়া, কেবল আমার পরে নয়, স্বস্থির পরেও। ওকে স্বাধীন কতৃত্বের সময় দাও না কেন। ডোমিনিয়ন স্টটস, অন্তত আজকের মতো । তা ছাড়া আমি তোমাকে নিয়ে একটা পরীক্ষা করতে চাই, কখনও তোমাকে কাজের কথা বলি নি। আজ বলে দেখব। নতুন অভিজ্ঞতা হবে।” বিভা বললে, “তাই হোক, বাকি থাকে কেন।” পকেট থেকে অভীক চামড়ার কেস বের করে খুলে দেখালে। একটা কবজিঘড়ি। ঘড়িটা প্লাটিনমের, সোনার মণিবন্ধ, হীরের টুকরোর ছিট দেওয়া। বললে, “তোমাকে বেচতে চাই ।” “অবাক করেছ, বেচবে ?” “হা, বেচব, আশ্চর্য হও কেন।” বিভী মুহূর্তকাল স্তন্ধ থেকে বললে, “এই ঘড়ি যে মনীষা তোমাকে জন্মদিনে দিয়েছিল মনে হচ্ছে তার বুকের ব্যথা এখনও ওর মধ্যে ধুকধুক্‌ করছে। জান সে কত দুঃখ পেয়েছিল, কত নিন্দে সয়েছিল আর কত দুঃসাধ্য অপব্যয় করেছিল উপহারটাকে তোমার উপযুক্ত করবার জন্যে ?” 鱷 অভীক বললে, “এ ঘড়ি সেই তো দিয়েছিল, কে দিয়েছে শেষ পর্যন্ত জানতেই দেয় নি। কিন্তু আমি তো পৌত্তলিক নই যে বুকের পকেটে এই জিনিসটার বেদি বাধিয়ে মনের মধ্যে দিনরাত শশখঘণ্ট। বাজাতে থাকব।” । “আশ্চর্য করেছ তুমি। এই ক’মাস হল সে টাইফয়েডে—” “এখন সে তো সুখদুঃখের অতীত।” “শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সে এই বিশ্বাস নিয়ে মরেছিল যে তুমি তাকে ভালোবাসতে।” “ভুল বিশ্বাস করে নি।” “তবে ?” “তবে আবার কী। সে নেই, কিন্তু তার ভালোবাসার দান আজও যদি আমাকে ফল দেয় তার চেয়ে আর কী হতে পারে।” বিভার মুখে অত্যন্ত একটা পীড়ার লক্ষণ দেখা দিল। একটুক্ষণ চুপ করে থেকে বললে, “এত দেশ থাকতে আমার কাছে বেচতে এলে কেন।” “কেননা জানি তুমি দর-কষাকষি করবে না।” "তার মানে কলকাতার বাজারে আমিই কেবল ঠকবার জন্যে তৈরি হয়ে আছি ?” “তার মানে ভালোবাসা খুশি হয়ে ঠকে।” এমন মানুষের পরে রাগ করা শক্ত, জোরের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে ছেলেমাস্তুষি। میسی په