পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

వరీ' . . . . রবীন্দ্র-রচনাবলী কর্তার তুমি অট্টহাসি।” । অভৗক বললে, “আমাকে তুমি মুখ ফুটে বলবে না, কিন্তু নিশ্চিত বুঝতে পারি, শীলার সম্বন্ধে তুমি আমার সাইকলজি জানতে চাও। ওকে আমার ঘোরতর অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে। অল্পবয়সে যেমন করে সিগারেট অভ্যাস হয়েছিল। মাথা ঘুরত তৰু ছাড়তুম না। মুখে লাগত তিতে, মনে লাগত গর্ব। ও জানে কী করে দিনে দিনে মৌতাত জমিয়ে তুলতে হয়। মেয়েদের ভালোবাসায় যে মদটুকু আছে, সেটাতে আমার ইনস্পিরেশন। আমি আর্টিস্ট। ও যে আমার পালের হাওয়৷ ও নইলে আমার তুলি যায় আটকে বালির চরে। বুঝতে পারি, আমার পাশে বসলে শীলার হৃৎপিণ্ডে একটা লালরঙের আগুন জলতে থাকে, ডেনজার সিগনাল, তার তেজ প্রবেশ করে আমার শিরায় শিরায় – দোষ নিয়ে না তপস্বিনী, ভাবছ সেটাতে আমার বিলাস, না গো না, সেটাতে আমার প্রয়োজন ।” “তাই তোমার এত প্রয়োজন ক্রাইসলারের গাড়িতে।” “তা স্বীকার করব । শীলার মধ্যে যখন গর্ব জাগে তখন ওর ঝলক বাড়ে । মেয়েদের এত গয়না কাপড় জোগাতে হয় সেইজন্যেই। আমরা চাই মেয়েদের মাধুর্য, ওরা চায় পুরুষের ঐশ্বৰ্ষ। তারই সোনালি পূর্ণতার উপরে ওদের প্রকাশের ব্যাক্গ্রাউণ্ড, । প্রকৃতির এই ফন্দি পুরুষদের বড়ো করে তোলবার জন্যে। সত্যি কি না বলে ।” i “সত্যি হতে পারে। কিন্তু কাকে বলে ঐশ্বর্য তাই নিয়ে তর্ক। ক্রাইসলারের গাড়িকে যারা ঐশ্বর্য বলে, আমি তো বলি, তারা পুরুষকে ছোটো করবার দিকে টানে।” অভীক উত্তেজিত হয়ে বলে উঠল, “জানি জানি, তুমি যাকে ঐশ্বর্য বল তারই সর্বোচ্চ চূড়ায় তুমি আমাকে পৌছিয়ে দিতে পারতে। তোমার ভগবান মাঝখানে এসে দাড়ালেন ।” অতীকের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বিভা বললে, “ওই এক কথা বার বার বোলে না। আমি তো বরাবর উলটোই শুনেছি। বিয়েট আর্টিস্টের পক্ষে গলার ফাস । ইন্সপিরেশনের দম বন্ধ করে দেয়। তোমাকে বড়ো করতে যদি পারতুম, আমার যদি সে শক্তি থাকত তা হলে—” ጝ অতীক ঝোঁকে উঠে বললে, “পারতুম কী, পেরেছ। আমার এই দুঃখু যে আমার সেই ঐশ্বৰ্ষ তুমি চিনতে পার নি। যদি পারতে তা হলে তোমার ধর্মকর্মের সব বাধন ছিড়ে আমার সঙ্গিনী হয়ে আমার পাশে এসে দাড়াতে ; কোনো বাধা