পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ર8૦ اذ- রবীন্দ্র-রচনাবলী । ফিরে এসেছে। বর্তমান ক্ষেত্রে ভালোবাসার সেই পাবেগ তার মনে নেই। : স্বাধিকার লঙ্ঘন করে কাউকে টাকা ধার দেবার কথা সে সাহস করে মনে আনতে পারলে না। তাই বিভা প্ল্যান করেছে, মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া দামী গয়না বেচে বা পাবে সেই টাকা অমরকে উপলক্ষ্য করে দেবে আপন স্বদেশকে । o, . বিভার কাছে যে-সব ছেলেমেয়ে মানুষ হচ্ছে, ও তাদের পড়ায় সাহায্য করে । আজ রবিবার। খাওয়ার পরে এতক্ষণ ওর ক্লাস বসেছিল। সকাল-সকাল দিল ছুটি । বাক্স বের করে মেঝের উপর একখানা র্কাথ পেতে তাতে একে একে বিভা গয়না সাজাচ্ছিল। ওদের পরিবারের পরিচিত জহুরীকে ডেকে পাঠিয়েছে। এমন সময় সিড়িতে পায়ের শব্দ শুনতে পেল অভীকের। প্রথমেই গয়নাগুলো তাড়াতাড়ি লুকোবার ঝোক হল, কিন্তু যেমন পাতা ছিল তেমনি রেখে দিলে। কোনো কারণেই অভীকের কাছে কোনো কিছু চাপ। দেবে, সে ওর স্বভাবের বিরুদ্ধে। অভীক ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে খানিকক্ষণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখল, বুঝল ব্যাপারখানা কী। বললে, “অসামান্তের পারানি কড়ি। আমার বেলায় তুমি মহামায়, ভূলিয়ে রাখে ; অধ্যাপকের বেলায় তুমি তারা, তরিয়ে দাও। অধ্যাপক জানেন কি, অবলা নারী মৃণালভূজে তাকে পারে পাঠাবার উপায় করেছে ?” "না, জানেন না।” “জানলে কি এই বৈজ্ঞানিকের পৌরুষে ঘা লাগবে না।” “ক্ষুদ্র লোকের শ্রদ্ধার দানে মহৎ লোকের অকুষ্ঠিত অধিকার, আমি তে। এই জানি । এই অধিকার দিয়ে তারা অনুগ্রহ করেন, দয়া করেন।” “সে কথা বুঝলুম, কিন্তু মেয়েদের গায়ের গয়না আমাদেরই অনন্দ দেবার জন্তে, আমরা যত সামান্তই হই– কারও বিলেতে যাবার জন্যে নয়, তিনি যত বড়োই হেন-না। আমাদের মতো পুরুষদের দৃষ্টিকে এ তোমরা প্রথম থেকেই উৎসর্গ করে রেখেছ। এই হারখানি চুনির সঙ্গে মুক্তোর মিল করা, এ আমি একদিন তোমার গলায় দেখেছিলেম, যখন আমাদের পরিচয় ছিল অল্প। সেই প্রথম পরিচয়ের স্মৃতিতে এই হারখানি এক হয়ে মিশিয়ে আছে। ওই হার কি একলা তোমার, ও যে আমারও।” 曝 "আচ্ছ, ওই হারটা না-হয় তুমিই নিলে।” 'டி. “তোমার সত্তা থেকে ছিনিয়ে-দেওয়া হার একেবারেই যে নিরর্থক। সে যে হবে চুরি । তোমার সঙ্গে নেব ওকে সবস্থদ্ধ, সেই প্রত্যাশ করেই বসে আছি।