পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२8२ রবীন্দ্র-রচনাবলী মাহুষরা বড়োলোকের মড়ক । কিন্তু দোহাই তোমার, আমাকে সেই বামনদের দলে ফেলো না । শোনো আমি কত বড়ো একটা ক্রিমিন্যাল পুণ্যকর্ম করেছি – দুর্গাপূজার চাদার টাকা আমার হাতে ছিল। সে টাকা দিয়ে দিয়েছি অমরবাবুর বিলেতযাত্রার ফণ্ডে । দিয়েছি কাউকে না ব’লে । যখন ফাস হবে, জীববলি খোজবার জন্যে মায়ের ভক্তদের বাজারে দৌড়তে হবে না। আমি নাস্তিক, আমি বুঝি সত্যকার পূজা কাকে বলে। ওরা ধর্মপ্রাণ, ওরা কী বুঝবে।” “এ কী কাজ করলে অভীক। তুমি যাকে বল তোমার, পবিত্র নাস্তিকধর্ম এ কাজ কি তার যোগ্য, এ যে বিশ্বাসঘাতকতা।” “মানি । কিন্তু আমার ধর্মের ভিত কিসে দুর্বল ক’রে দিয়েছিল তা বলি। খুব ধুম করে পূজা দেবে ব’লে আমার চেলার কোমর বেঁধেছিল। কিন্তু চাদার যে সামান্য টাক উঠল সে যেমন হাস্যকর তেমন শোকাবহ । তাতে ভোগের পাঠাদের মধ্যে বিয়োগাস্ত নাট্য জমত না, পঞ্চমাঙ্কের লাল রঙটা হত ফিকে। আমার তাতে আপত্তি ছিল না। স্থির করেছিলেম নিজেরাই কাঠি হাতে ঢাকে ঢোলে বেতাল চাটি লাগবে অসহ্য উৎসাহে আর লাউকুমড়োর বক্ষ বিদীর্ণ করব স্বহস্তে খড়গাঘাতে । নাস্তিকের পক্ষে এই যথেষ্ট, কিন্তু ধর্মপ্রাণের পক্ষে নয়। কখন সন্ধ্যাবেলায় আমাকেন। জানিয়ে ওদের একজন সাজল সাধুবাবা, পাচজন সাজল চেলা, কোনো একজন ধনী বিধবা বুড়িকে গিয়ে বললে, তার যে ছেলে রেঙ্গুনে কাজ করে, জগদম্ব স্বপ্ন দিয়েছেন, যথেষ্ট পাঠ আর পুরোবহরের পুজো না পেলে মা তাকে আস্ত খাবেন । তার কাছ থেকে স্কু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পাচ হাজার টাকা বের করেছে। যেদিন শুনলুম, সেইদিনই টাকাটার সংকার করেছি। তাতে আমার জাত গেল। কিন্তু টাকাটার কলঙ্ক ঘুচল। এই তোমাকে করলুম জামার কনফেশনাল। পাপ কবুল ক’রে পাপ ক্ষালন করে নেওয়া গেল। পাচ হাজার টাকার বাইরে অাছে উনত্রিশটি মাত্র টাকা । সে রেখেছি কুমড়োর বাজারের দেনাশোধের জন্য ।” .” f

  • "স্বস্মি এসে বললে, “বচ্চ বেহারার জর বেড়েছে, সঙ্গে সঙ্গে কাশি, ডাক্তারবাৰু কী লিখে দিয়ে গেছেন, দেখে দাও সে ।” 3.

বিভার হাত চেপে ধরে অভীক বললে, “বিশ্বহিতৈষিণী, রোগতাপের তদবির করতে দিনরাত ব্যস্ত আছ, আর যে-সব হতভাগার শরীর অতি বিত্র রকমে স্বস্থ তাদের মনে করবার সময় পাও না।” : * . “বিশ্বহিত নয় গো, কোনো একজন অতি স্থস্থ হতভাগাকে ভুলে থাকবার জন্যেই