পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৪৬ J রবীন্দ্র-রচনাবলী গল্পটার্কে বসন্তরাগে পঞ্চমস্থরে বাধতে চাই নে। নবীনমাধব নামটা বোধ হয় চলে যেতে *পারবে, ওর বাস্তবের শামলা রঙটা ধুয়ে ফেলে করা যেতে পারত নবারুণ সেনগুপ্ত ; , কিন্তু তা হলে খাটি শোনাত না, গল্পটা নামের বড়াই ক’রে লোকের বিশ্বাস হারাত, লোকে মনে করত ধারকর জামিয়ার পরে সাহিত্যসভায় বাবুয়ান করতে এসেছে। আমি বাংলাদেশের বিপ্লবীদলের একজন । ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মহাকর্ষশক্তি আগুীমানতীরের খুব কাছাকাছি টান মেরেছিল। নান৷ বাক পথে সি. আই. ডি.-র ফাস এড়িয়ে এড়িয়ে গিয়েছিলুম আফগানিস্থান পর্যন্ত। অবশেষে পোঁচেছি আমেরিকায় খালাসির কাজ নিয়ে। পূর্ববঙ্গীয় জেদ ছিল মজ্জায়, একদিনও ভুলি নি যে, ভারতবর্ষের হাতপায়ের শিকলে উখো ঘসতে হবে দিনরাত যতদিন বেঁচে থাকি। কিন্তু বিদেশে কিছুদিন থাকতেই একটা কথা নিশ্চিত বুঝেছিলুম, আমরা যে প্রণালীতে বিপ্লবের পাল শুরু করেছিলুম, সে যেন আতশবাজিতে পটকা ছোড়ার মতে, তাতে নিজের পোড়াকপাল পুড়িয়েছি অনেকবার, দাগ পড়ে নি ব্রিটিশ রাজতক্তে। আগুনের উপর পতঙ্গের অন্ধ আসক্তি। যখন সদৰ্পে ঝাপ দিয়ে পড়েছিলুম তখন বুঝতে পারি নি, সেটাতে ইতিহাসের যজ্ঞানল জালানো হচ্ছে না, জালাচ্ছি নিজেদের খুব ছোটে৷ ছোটো চিতানল। ইতিমধ্যে যুরোপীয় মহাসমরের ভীষণ প্রলয়রূপ তার অতি বিপুল আয়োজন সমেত চোখের সামনে দেখা দিয়েছিল— এই যুগান্তরসাধিনী সর্বনাশাকে আমাদের খোড়োঘরের চণ্ডীমণ্ডপে প্রতিষ্ঠা করতে পারব সে দুরাশ মন থেকে লুপ্ত হয়ে গেল ; সমারোহ ক’রে আত্মহত্য করবার মতোও আয়োজন ঘরে নেই। তথন ঠিক করলুম, ন্যাশনাল দুর্গের গোড়া পাকা করতে হবে। স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলুম, বচিতে যদি চাই আদিম যুগের হাত দুখানায় যে কটা নখ আছে তা দিয়ে লড়াই করা চলবে না। এ যুগে যন্ত্রের সঙ্গে যন্ত্রের দিতে হবে পাল্ল ; যেমন-তেমন করে মরা সহজ, কিন্তু বিশ্বকর্মর চেলাগিরি করা সহজ নয়। অধীর হয়ে ফল নেই, গোড়া থেকেই কাজ শুরু করতে হবে— পথ দীর্ঘ, সাধন কঠিন । দীক্ষা নিলুম যন্ত্রবিদ্যায়। ডেট্রয়েটে ফোডের মোটর-কারখানায় কোনোমতে ঢুকে পড়লুম। হাত পাকাচ্ছিলুম, কিন্তু মনে হচ্ছিল না খুব বেশি দূর এগোচ্ছি। একদিন কী দুবুদ্ধি ঘটল, মনে হল, ফোর্ডকে যদি একটুখানি আভাস দিই যে, আমার উদেখ নিজের উন্নতি করা নয়, দেশকে বাচানো, তা হলে স্বাধীনতাপূজারী আমেরিকার ধনস্থষ্টির জাদুকর বুঝি খুশি হবে, এমন কি আমার রাস্ত হয়তে করে দেবে প্রশস্ত। ফোন্ড চাপা হাসি হেসে বললে, “আমার নাম হেনরি ফোড, পুরাতন ইংরেজি নাম । আমাদের ইংলণ্ডের মামাতো ভাইর অকেজে, তাদের আমি কেজো করব— এই