পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९७० রবীন্দ্র-রচনাবলী হাতে একটি পালিশ-করা লাঠি, গলায় শুভ্ৰ পাট-করা চাদর, ধুতি যত্বে কেঁচানে, গায়ে তসরের জাম, মাথায় শুভ্র চুল বিরল হয়ে এসেছে, কিন্তু পরিপাটি করে আঁচড়ানো। স্পষ্ট বোঝা যায় এর সাজসজ্জায় এর দিনযাত্রায় নাতনির হাতের শিল্পকার্য। ইনি যে অতিলালনের অত্যাচার সহ করেন, সে কেবল এই মেয়েটিকে খুশি রাখবার জন্তে । . আমার বৈজ্ঞানিক খবরকে ছাড়িয়ে উঠল, এদের খবর নেওয়া । অধ্যাপকের নাম ব্যবহার করব, অনিলকুমার সরকার। গত জেনেরেশনের কেম্বি জ য়ুনিভারসিটির পি. এইচ-ডি দলের একজন। মাসকয়েক আগে একটি ঔপনাগরিক কলেজের অধ্যক্ষত৷ ত্যাগ করে এখানকার স্টেটের একটা পরিত্যক্ত ডাকবাংলা ভাড়া নিয়ে নিজের খরচে সেটা বাসযোগ্য করেছেন। এইটে হল ইতিহাসের খসড়া, বাকিটুকু বঙ্কিমের চিঠি থেকে মিলিয়ে নেওয়া যেতে পারে। আমার গল্পের আদিপর্ব শেষ হয়ে গেল। ছোটোগল্পের আদি ও অস্তে বেশি ব্যবধান থাকে না। জিনিসটাকে ফলিয়ে বলবার লোভ করব না, ওর স্বভাব নষ্ট করতে চাই নে । অচিরার সঙ্গে স্পষ্ট কথা বলার যুগ এল সংক্ষেপেই। সেদিন চড়িভাতি হয়েছিল তনিক নদীর তীরে । * অধ্যাপক ছেলেমানুষের মতন হঠাৎ আমাকে জিগ গেস করে বসলেন, “নবীন, তোমার কি বিবাহ হয়েছে।” প্রশ্নটা এতই সুস্পষ্ট ভাবব্যঞ্জক যে, আর কেউ হলে ওটা চেপে যেত। আমি উত্তর করলুম, “না, এখনও তো হয় নি।” অচিরার কাছে কোনো কথাই এড়ায় না। সে বললে, “দাদু, ঐ এখনও শব্দটা সংশয়গ্রস্ত কন্যাকর্তাদের মনকে সাস্তুনা দেবার জন্যে । ওর কোনো যথার্থ মানে নেই।” “একেবারে মানে যে নেই, এ কথা নিশ্চিত স্থির করলেন কী ক’রে ।” “এটা গণিতের প্রব্লেম— তাও হাইয়ার ম্যাথ ম্যাটিক্স বললে যা বোঝায়, তা নয়। পূর্বেই শোনা গেছে, আপনি ছত্রিশ বছরের ছেলেমানুষ। হিসেব করে দেখলুম, এর মধ্যে আপনার মা অন্তত পাচসাতবার আপনাকে বলেছেন, ‘বাবা, ঘরে বউ আনতে চাই ।” আপনি বলেছেন, তার আগে চাই লোহার সিন্দুকে টাকা আনতে মা চোখের জল মুছে চুপ করে রইলেন। তারপরে ইতিমধ্যে আপনার আর-সব হয়েছে, কেবল ফাসি ছিল বাকি । শেষকালে এখানকার রাজসরকারে যখন মোটা মাইনের পদ