পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬২ রবীন্দ্র-রচনাবলী তার কেবলই ভয়, বাইরের লোক তার নাতনিকে ঠিক বুঝতে পারবে না। অচিরা বললে, “বাইরের লোক মেয়েদের জেঠামি সইতে পারে না, তাদের কথা তুমি ভেবে। না। তুমি আমাকে ঠিক বুঝলেই হল।” অচিরা খুব বড়ো কথাও বলে থাকে হাসির ছলে, কিন্তু আজ সে কী গম্ভীর। আমার একটা কথা আন্দাজে মনে হল, ভবতোষ ওকে বুঝিয়েছিল যে, সে যে ভারতসরকারের উচ্চ গগনের জ্যোতিলোক থেকে বধূ এনেছে, তারও লক্ষ্য খুব উচ্চ এবং নিঃস্বার্থ। ব্রিটিশ রাষ্ট্রশাসনের ভাণ্ডার হতেই সে শক্তি সংগ্রহ করতে পারবে দেশের কাজে লাগাতে। এত সহজ নয় অচিরাকে ছলনা করা। সে যে ভোলে নি, তার প্রমাণ রয়ে গেছে সেই দ্বিখণ্ডিত চিঠির খামটা থেকেই। . Q অচিরা আবার বললে, “দেবযানী কচকে কী অভিসম্পাত দিয়েছিল জানেন, নবীনবাৰু?” "ן וה" “বলেছিল, ‘তোমার জ্ঞানসাধনার ধন তুমি নিজে ৰ্যবহার করতে পারবে না, অন্যকে দান করতে পারবে ।’ আমার কাছে কথাটা আশ্চর্য বোধ হয়। যদি এই অভিসম্পাত আজ দিত কেউ য়ুরোপকে, তা হলে সে বেঁচে যেত। বিশ্বের জিনিসকে নিজের জিনিসের মতো ব্যবহার করেই ওরা লোভের তাড়ায় মরছে। সত্যি কি না বলো, দাদু ” “খুব সত্যি। কিন্তু আশ্চর্য এই, এত কথা তুমি কী করে ভাবলে ।” “নিজগুণে একটুও নয়। ঠিক এইরকম কথা তোমার কাছে অনেকবার শুনেছি। তোমার একটা মহাগুণ আছে, ভোলানাথ তুমি, কখন কী বল, সমস্ত ভুলে যাও। চোরাই মালের উপর নিজের ছাপ লাগিয়ে দিতে ভয় থাকে না।” আমি বললুম, "চুরিবিদ্যা বড়ো বিদ্যা। বিদ্যায় বল, রাষ্ট্রেই বল, বড়ো বড়ো সম্রাট বড়ে বড়ো চোর। আসল কথা, তারাই ছিচকে চোর ছাপ মারবার পূর্বেই যারা ধরা পড়ে ।” অচিরা বললে, “ওঁর কত ছাত্র ওঁর মুখের কথা খাতায় টুকে নিয়ে বই লিখে নাম করেছে। উনি তাদের লেখা পড়ে আশ্চর্য হয়ে প্রশংসা করেন। জানতেই পারেন না, নিজের প্রশংসা নিজেই করছেন। আমার ভাগ্যে এ প্রশংসা প্রায়ই জোটে ; নবীনবাবুকে জিজ্ঞাসা করলেই উনি কবুল করবেন, আমার ওরিজিন্তালিটির কথা খাতায় লিখতে শুরু করেছেন, যে-খাতায় তাম্রপ্রস্তরযুগের নোট রাখেন। মনে আছে দাদু, অনেকদিনের কথা, যখন কলেজে ছিলে, আমাকে কচ ও দেবযানীর কবিতা শুনিয়েছিলে ? সেইদিন