পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

`ङिन नश्क्रौ । २१७ আছে যাদের। সোহিনী স্বয়ং সমস্ত আইনের প্যাচ নিতে লাগল বুঝে। তার উপরে নারীর মোহজাল বিস্তার করে দিলে স্থান বুঝে উকিলপাড়ায়। সেটাতে তাঁর অসংকোচ নৈপুণ্য ছিল, সংস্কার মানার কোনো বালাই ছিল না। মামলায় জিতে নিলে একে একে, দুর সম্পর্কের দেওর গেল জেলে দলিল জাল করার অপরাধে। ওদের একটি মেয়ে আছে, তার নামকরণ হয়েছিল নীলিমা । মেয়ে স্বয়ং সেটিকে বদল করে নিয়েছে— নীলা । কেউ না মনে করে, বাপ-মা মেয়ের কালে রঙ দেখে একটা মোলায়েম নামের তলায় সেই নিন্দেটি চাপ দিয়েছে। মেয়েটি একেবারে ফুটফুটে গৌরবর্ণ। মা বলত, ওদের পূর্বপুরুষ কাশ্মীর থেকে এসেছিল– মেয়ের দেহে ফুটেছে কাশ্মীরী শ্বেতপদ্মের আভা, চোখেতে নীলপদ্মের আভাস, আর চুলে চমক দেয় যাকে বলে পিঙ্গলবর্ণ। মেয়ের বিয়ের প্রসঙ্গে কুলশীল জাতগুষ্টির কথা বিচার করবার রাস্ত ছিল না। একমাত্র ছিল মন ভোলাবার পথ, শাস্ত্রকে ডিঙিয়ে গেল তার ভেলকি । অল্প বয়সের মাড়োয়ারি ছেলে, তার টাকা পৈতৃক, শিক্ষা এ কালের । অকস্মাৎ সে পড়ল এসে অনঙ্গের অলক্ষ্য ফণদে। নীল একদিন গাড়ির অপেক্ষায় ইস্কুলের দরজার কাছে ছিল দাড়িয়ে । সেই সময় ছেলেটি দৈবাৎ তাকে দেখেছিল। তার পর থেকে আরও কিছুদিন ঐ রাস্তায় সে বায়ুসেবন করেছে। স্বাভাবিক স্ত্রীবুদ্ধির প্রেরণায় মেয়েটি গাড়ি আসবার বেশ কিছুক্ষণ পূর্বেই গেটের কাছে দাড়াত। কেবল সেই মাড়োয়ারি ছেলে নয়, আরও দুচার সম্প্রদায়ের যুবক ঐখানটায় অকারণ পদচারণার চর্চা করত। তার মধ্যে ঐ ছেলেটিই চোখ বুজে দিল ঝশপ ওর জালের মধ্যে। আর ফিরল না। সিভিল মতে বিয়ে করলে সমাজের ওপারে। বেশি দিনের মেয়াদে নয়। তার ভাগ্যে বন্ধটি এল প্রথমে, তার পরে দাম্পত্যের মাঝখানটাতে দাড়ি টানলে টাইফয়েড, তার পরে মুক্তি । স্বষ্টিতে অনাস্থষ্টিতে মিশিয়ে উপদ্রব চলতে লাগল। মা দেখতে পায় তার মেয়ের ছটফটানি। মনে পড়ে নিজের প্রথম বয়সের জালামুখীর অগ্নিচাঞ্চল্য । মন উদবিগ্ন হয়। খুব নিবিড় করে পড়াশোনার বেড়া ফাদতে থাকে। পুরুষ শিক্ষক রাখল না। একজন বিদুষীকে লাগিয়ে দিল ওর শিক্ষকতায় । নীলার যৌবনের আঁচ লগত তারও মনে, তুলত তাকে তাতিয়ে অনির্দেশ কামনার তপ্তবাম্পে। মুগ্ধের দল ভিড় করে আসতে লাগল এদিকে ওদিকে । কিন্তু দরওয়াজ বন্ধ। বন্ধুত্বপ্রয়াসিনীরা নিমন্ত্রণ করে চায়ে টেনিসে সিনেমায়, নিমন্ত্রণ পৌছয় না কোনো ঠিকানায়। অনেক লোভী ফিরতে লাগল মধুগন্ধভরা আকাশে, কিন্তু কোনো অভাগ্য কাঙাল সোহিনীর ছাড়পত্র পায় ন। এদিকে দেখা যায় উৎকণ্ঠিত মেয়ে স্থযোগ পেলে উকিঝুকি দিতে চায় অজায়গায়।