পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१8 , রবীন্দ্র-রচনাবলী । বই পড়ে যে বই টেক্সটবুক কমিটির অনুমোদিত নয়, ছবি গোপনে আনিয়ে নেয় যা আর্টশিক্ষার জাদুকুল্য করে বলে বিড়ম্বিত । ওর বিদুষী শিক্ষয়িত্রীকে পর্যন্ত অন্যমনস্ক করে দিলে। ডায়োসিশন থেকে বাড়ি ফেরবার পথে আলুথলুচুলওয়াল গোফেররেখামাত্র-দেওয়া স্বন্দরহানো এক ছেলে ওর গাড়িতে চিঠি ফেলে দিয়েছিল। ওর রক্ত উঠেছিল ছমছম করে। চিঠিখান লুকিয়ে রেখেছিল জামার মধ্যে। ধরা পড়ল মায়ের কাছে । সমস্ত দিন ঘরে বন্ধ থেকে কাটল অনাহারে । 屬 সোহিনীর স্বামী যাদের বৃত্তি দিয়েছিলেন, সেই-সব ভালো ভালে ছাত্রমহলে সোহিনী পাত্ৰ সন্ধান করেছে। সবাই প্রায় আড়ে আড়ে ওর টাকার থলির দিকে তাকায় । একজন তো তার থিসিস ওর নামে উৎসর্গ করে বসল। ও বললে, “হায় রে কপাল, লজ্জায় ফেললে আমাকে । তোমার পোস্টগ্রাজুয়েট মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে শুনলুম, অথচ মালচন্দন দিলে অজায়গায়, হিসাব করে ভক্তি না করলে উন্নতি হবে না ষে।” কিছুদিন থেকে একটি ছেলের দিকে সোহিনী দৃষ্টিপাত করছিল। ছেলেটি পছন্দসই বটে। তার নাম রেবতী ভট্টাচার্ষ । এরই মধ্যে সায়ান্সের ডাক্তার পদবীতে চড়ে বসেছে। ওর দুটো-একটা লেখার যাচাই হয়ে গেছে বিদেশে । VL) লোকের সঙ্গে মেলামেশা করবার কলাকৌশল সোহিনীর ভালো করেই জানা আছে। মন্মথ চৌধুরী রেবতীর প্রথম দিককার অধ্যাপক। তাকে নিলে বশ করে। কিছুদিন চায়ের সঙ্গে রুটিটোস্ট, অমলেট, কখনও বা ইলিশমাছের ডিমের বড় খাইয়ে কথাটা পাড়লে । বললে, “আপনি হয়তো ভাবছেন আমি আপনাকে বারে বারে চা খেতে ডাকি কেন।” “মিসেস মল্লিক, আমি তোমাকে নিশ্চয় বলতে পারি, সেটা আমার দুর্ভাবনার বিষয় নয়।” * সোহিনী বললে, “লোকে ভাবে, আমরা বন্ধুত্ব করে থাকি স্বার্থের গরজে ।” “দেখে মিসেস মল্লিক, আমার মত হচ্ছে এই—গরজটা ষারই হোক, বন্ধুত্বটাই তো লাভ । আর এই ব৷ কম কথা কী, আমার মতে অধ্যাপককে দিয়েও কারও স্বার্থসিদ্ধি হতে পারে। এ জাতটার বুদ্ধি কেতাবের বাইরে হাওয়া খেতে পায় না বলে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আমার কথা শুনে তোমার হাসি পাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। দেখে, যদিও আমি মাস্টারি করি তবু ঠাট্টা করতেও পারি। দ্বিতীয়বার চা খেতে ডাকবার পূর্বে এটা জেনে রাখা ভালো ।” ካ